তিন সিটি নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই ৪৭৮টি উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা পদ পূরণে কোমর বেঁধে নেমেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৫ জুন ভোট গ্রহণের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার কিংবা বৃহস্পতিবার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইসি কর্মকর্তারা জানায়, নির্বাচন হলে দেড় হাজার নারী সদস্য যোগ হবে ৪৭৮টি উপজেলায়।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ মঙ্গলবার তার ইসির কার্যালয়ে বলেন, সামনে রমজান আসছে। এর আগেই নারী সদস্য পদের ভোট গ্রহণ শেষ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।আসন্ন ১৯ জুন থেকে রমজান মাস শুরু হতে যাওয়ায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও আপিল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ এবং ভোট কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা সদরের একটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে ভোট নেওয়া হবে। জনপ্রতিনিধিরাই এ নির্বাচনে ভোটার। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেও ‘পরোক্ষ ভোটে’ নির্বাচিত হবে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য।ইসি কর্মকর্তারা জানান, ১৯ জুন থেকে রমজান শুরুর কথা রয়েছে। উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্যদের ভোটের জন্য ২৪ মে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ও ১৫ জুন ভোটের তারিখ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ-১৯৯৮) আইনের ৬ ধারায় বলা আছে, একটি উপজেলাতে ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা থাকলে উপজেলায় নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত আসন হবে ৪টি। ইউপি/পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরাই সংশ্লিস্ট উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারবেন। নির্বাচিতদের জন্য এলাকা বন্টনও করা হবে এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৪ অনুসারে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা নির্ধারণ এবং বিধি ৫ এ সংরক্ষিত আসনের এলাকা নির্ধারণের বিধান রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে ভোট দিয়ে উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচন করার বিধান আছে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, নবগঠিত উপজেলা নিয়ে বর্তমানে ৪৮৯টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এরমধ্যে ১১টি ছাড়া ৪৭৮টি উপজেলার সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আসনের সীমানা নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি গেজেটে প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এসব উপজেলায় নির্বাচন উপযোগী ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে এসব উপজেলার সীমানা বিন্যাস করতে ২০১৩ সালের ১৫ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রথম দফায় চিঠি দেয় ইসি। এর পর দ্বিতীয় দফায় ওই মাসের ২৬ তারিখে আরেকটি চিঠি পাঠায় কমিশন। কয়েকদফায় চিঠি পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে গত দু’বছরে ৪৭৮টির সীমানা বিন্যাস করে মন্ত্রণালয়। দেশের সব উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের পদ রয়েছে ১ হাজার ৫৭৭টি। এতে ভোটার রয়েছেন ১৪ হাজার ১২ জন। যেসব প্রতীকে নির্বাচন হবে : সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের জন্য সংরক্ষিত প্রতীকের মধ্যে রয়েছে- টেবিল, মোরগ, পেঁপে, বালতি, হরিণ, চাঁদ, ঢেঁকি, খরগোশ, বক ও গিটার। এ ভোটে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ব্যয় দশ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় দশ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ৫ এপ্রিল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালাতেও সংশোধনী আনা হয়েছে।উল্লেখ্য, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। কিন্ত ওই কমিশন আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরও উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা আসন পূরণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নের্তৃত্বাধীন কমিশন গঠিত হয়। এ কমিশনের অধীনে ২০১৩ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন বাকি ছিল।এইচএস/এআরএস/এমএস
Advertisement