মতামত

পাহাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির দুর্গম লংগদু উপজেলা সদরের চারটি গ্রামে পাহাড়িদের অন্তত ২০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এ ঘটনার জন্য বাঙালিদের দায়ী করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় গতকাল বেলা ১টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এ ধরনের হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও মারধরের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত। অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের চারমাইল এলাকায় রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন সকালে মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী নিয়ে তিনি লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিলেন। বাঙালিদের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত। নুরুল ইসলাম পেশায় ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা মোটর সাইকেলের চালক ছিলেন।

পাহাড়িদের অভিযোগ, বাত্যাপাড়া গ্রামে নুরুল ইসলামের লাশ আনার পর স্থানীয় বাঙালিরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলটি গ্রামের পাহাড়ি বাসিন্দাদের এলাকার দিকে যেতে থাকে। মিছিলটি গ্রামের সীমানা অতিক্রম করে পাশের তিনটিলা গ্রামে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিছিলকারীরা তিনটিলা গ্রামে পাহাড়িদের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভয়ে অনেক পাহাড়ি পরিবার গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। এরপর পাশের মানিকজোড়ছড়া, বড়াদম ও বাত্যাপাড়া গ্রামের অসংখ্য বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন মিছিলকারীরা।

রাঙামাটির দুর্গম লংগদু উপজেলা সদরের চারটি গ্রামে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিন শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে সাতজনকে। হামলার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পাহাড়িদের মধ্যে। ক্ষতিগ্রস্তরা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। কিছুতেই এ ধরনের পরিস্থিতি কাম্য নয়। এটা নিছকই আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা নয়। এর সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ও জড়িত। কোনো অবস্থায়ই এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় যেখানে আস্থার সংকট প্রকট হয়ে উঠে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শান্ত করতে হবে পরিবেশ। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারে এবং তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয় নিশ্চিত করতে হবে সেটিও।

Advertisement

এইচআর/জেআইএম