খেলাধুলা

কে জিতবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : রিয়াল না জুভেন্তাস?

ইংল্যান্ডে বাজছে ক্রিকেট যুদ্ধের দামামা। চলছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এরই মধ্যে ক্রিকেটসহ সব কিছু ছাপিয়ে ইংল্যান্ডে পড়েছে সারা বিশ্বের চোখ। ওয়েলসের সমূদ্র তীরবর্তী শহর কার্ডিফে যে বসছে আজ জমজমাট উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল! মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ এবং জুভেন্তাস। রাত পৌনে ১টায় শুরু হবে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ম্যাচটি।

Advertisement

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শেষ ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। তার আগেই ৫ জুন, লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে টাইগাররা; কিন্তু রিয়াল-জুভেন্তাসের ‘ফাইনাল’ আকর্ষণ অনেক আগেই তামিম ইকবালকে টেনে নিয়ে গেছে কার্ডিফে। এত কাছে থেকেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল স্বচক্ষে না দেখলে কী হয়!

আজ হয়তো অনেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াইয়ের কথাটি ভুলেই যাবে। কারণ, খেলাধুলার দুনিয়ার সবগুলো রাস্তাই যে এখন গিয়ে মিশে গেছে কার্ডিফে! ফুটবলপ্রেমী কোটি কোটি চোখই যে আজ নিবদ্ধ হয়ে যাবে টিভি সেটের ওপর। সেখানে আর কোনো কিছুই খেলাপ্রিয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না। কারণ ফুটবল মহারণে মুখোমুখি হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ এবং জিয়ানলুইজি বাফনের জুভেন্তাস।

স্প্যানিশ দৈনিকের শিরোনাম, কার্ডিফ শহরের নাম এখন ‘বেল সিটি’। শহরের বড় বড় মু্র্যাল, সাইনবোর্ড, পোস্টারে গ্যারেথ বেলের ছবি। কাগজে কাগজে বেলকে নিয়ে খবর। এক প্রতিবেশী বলেছেন, কী করে বেল ছোটবেলায় স্কুল থেকে বেরোতেন বল হাতে নিয়ে। তার একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘ভালো লোকেদের ভালো কিছু পাওয়া উচিত। গ্যারেথ খুব ভালো ছেলে। ওর ভালো কিছু সম্মান প্রাপ্য।’

Advertisement

নিজের শহরে ফ্লাইং ওয়েলশম্যান কি প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাবেন? নাকি ৪-৩-৩ থেকে ছক পাল্টে জিনেদিন জিদান ৪-৪-২ ছকে খেলাবেন ইস্কোকে? কার্ডিফে বেলের জন্য অধিকাংশ সমর্থন থাকবে রিয়ালের দিকে। ৭০০ জন স্প্যানিশ থাকেন কার্ডিফে। তারাও রিয়ালের জয়োত্সবের অপেক্ষায়। ম্যানচেস্টারে হামলার পর এমন কড়াকড়ি ‘বেল সিটি’তে যে, রোনালদোদের হোটেলে ঢুকতে হল পিছনের দরজা দিয়ে।

‘হামলা’ যা চালানোর তা অবশ্য চালালেন দানি আলভেজ। জুভেন্তাস তারকা সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘১৯৯৮ সালের ফাইনালে রিয়াল যে জুভকে হারিয়ে ছিল, সেই গোলটা ছিল অফসাইডে।’ বার্সেলোনায় থাকাকালীন রোনালদোর সঙ্গে মোটেই ভালো সম্পর্ক ছিল না আলবেজের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগে সেই আগুনই জ্বালিয়ে দিলেন তিনি।

যার হাতে গ্যারেথ বেলের ভাগ্য, সেই জিদান তার ফুটবলারদের তাতাতে ২০০৬ সালের ফিল্ম ‘থ্রি হান্ড্রেড’ দেখাচ্ছেন নিয়মিত। সেই সিনেমায় পারসিয়ান যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। ফরাসি জিদান ওই ফিল্ম দেখে মুগ্ধ স্পার্টানরা একা পুরো বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়ছে দেখে। তিনি চান, তার শিষ্যরা এভাবে জ্বলে উঠুন।

স্প্যানিশ দৈনিকগুলোতে জিদানের ২০০৩ সালের একটি পুরোনো ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছে। জিদান সেখানে বলেছিলেন, রিয়ালের হয়ে ডেসিমা, উনডেসিমা ও দুওডেসিমা জিততে চান। মানে দশম, একাদশ, দ্বাদশ ট্রফি। প্রথম দুটি ট্রফি পেয়ে গিয়েছেন সহকারী ম্যানেজার ও ম্যানেজার হিসেবে। আজ ট্রফি জিতলে তিনি হবেন মিগুয়েল মুনোজের পর প্রথম রিয়াল ফুটবলার, যিনি কোচ এবং ফুটবলার হিসেবে ট্রফি জিতেছেন।

Advertisement

জিদান জুভেন্তাসেই প্রস্ফুটিত হন ফুটবলার হিসেবে। রিয়ালের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারতে হয়েছিল তার দলকে। সেই ক্ষত বুকে রেখে দিয়েছেন জুভেন্তাসের অজস্র সমর্থক এবং বুফন। সর্বকালের সেরা কিপার হওয়ার দাবিদার বুফনের জন্যই জুভেন্তাসের জন্যই আজ গলা ফাটাবেন অনেকে।

রোনালদো? টানা চার মওসুম তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ স্কোরার। এবার তিনি মেসির (১১ গোল ) থেকে একটা গোল পিছিয়ে। তার মোটিভেশন ট্রফি জয়ের পাশাপাশি এটাও- একটা গোল চাই।

১৯০২ সালে, রিয়াল মাদ্রিদ প্রতিষ্ঠার সামান্য ক’দিন আগে লন্ডনের কেনিংটন মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন রিয়ালের প্রথম দিকের দুই কর্তা। সেখানে করিন্থিয়ান্স ক্লাবের সাদা জার্সি দেখে অভিভূত হয়ে যান তারা। স্পোর্টসম্যানশিপ এবং আভিজাত্য দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেন, রিয়ালের জার্সি হবে সাদা। আজ অবশ্য রোনালদোদের গায়ে থাকবে অন্য জার্সি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোনালদো-বুফনের পাশাপাশি আরও কিছু চরিত্র ঝলসে উঠবেন এখানে। রিয়ালের সাফল্য নির্ভর করছে মডরিচ, ক্রুস, ইস্কোর মাঝমাঠে কর্তৃত্বের উপর। জুভেন্তাস তাদের বিখ্যাত ডিফেন্স ছাড়া তাকিয়ে থাকবে দুই আর্জেন্টাইন দিবালা ও হিগুয়াইনের দিকে। জুভের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাভেল নেদভেদ বলেছেন, ‘আমাদের টিম ছিয়ানব্বইয়ের পর অনেকবার ফাইনালে উঠে হেরেছে। এবার অনেক ফোকাসড, রিল্যাক্সড এবং চাপহীন।’

বুফন সম্ভবত সবচেয়ে চাপে। হয়তো তার শেষ সুযোগ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার। ক্যারিয়ার বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে অনেক ট্রফি জেতা হয়েছে বুফনের। এই একটি ট্রফিই বাকি তার শো-কেসে ওঠার। সেটাও শেষ বেলায় এসে জিততে চান তিনি।

আইএইচএস/জেআইএম