খেলাধুলা

অনন্য কীর্তি গড়ে শিরোপার দোরগোড়ায় নাসির

ক্রিকেটার হিসেবে লিগ বিজয়ী হয়েছেন আগে। কিন্তু তার নেতৃত্বে দল লিগ বিজয়ী হয়নি কখনো। এবার প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হাতছানি। আর একটি মাত্র ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন তার দল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।

Advertisement

৫ জুন প্রাইম দোলেশ্বরকে হারাতে পারলেই ব্যাস- শিরোপা বিজয় উৎসবে মেতে ওঠা যাবে। তারই প্রহর গুণছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। যার নেতৃত্বে শিরোপার দোরগোড়ায় গাজী গ্রুপ, সেই নাসিরও রোমাঞ্চিত। উন্মুখ অপেক্ষা- কখন আসবে সে শুভক্ষণ? কখন লিগ বিজয়ী হওয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে? কখন লিগ শিরোপা নিশ্চিত হবে তার দলের? নাসির এখন অমন ভাবতেই পারেন। কারণ শিরোপা জেতার পথে সবচেয়ে বড় বাধাটি আজ অতিক্রম করেছে তার দল।

প্রাইম দোলেশ্বরও কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে। তারপরও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আবাহনী। সুপার লিগে আবাহনীই ছিল একমাত্র দল যারা তিন ম্যাচের সবকটায় অনায়াসে জিতেছে। আজকের ম্যাচে খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা জিতে গেলে গাজী গ্রুপ আর আবাহনীর পয়েন্ট সমান (১৫ খেলায় ২২ করে) হয়ে যেত। অর্থাৎ হারলেই কক্ষপথ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যেত গাজী গ্রুপ। কিন্তু অধিনায়ক নাসির সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে দলকে ঠিক পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। নাসিরের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে (বল হাতে ৩/৩৩ ও ব্যাট হাতে ৫৬*) অাবাহনীকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে (১৫ খেলায় ২৪) গাজী গ্রুপ। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরে ডাক পাওয়ায় সব ম্যাচ খেলা হয়নি। সাকুল্যে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। আর তাতেই ব্যাট ও বল হাতে দারুণ উজ্জ্বল নাসির। নাসির ব্যাট হাতে গড়েছেন অনন্য কীর্তি। এখন পর্যন্ত লিগে তার স্কোর ১০৬*+৪১*+১৫*+৬৪+১৩৪*+৬১*+৫৬* = ৪৭৭। এই সাত ম্যাচে একবার মাত্র আউট হওয়ার কারণে তার গড়ও ৪৭৭.০০। ঢাকা লিগে সেটা সিনিয়র ডিভিশন হোক কিংবা প্রিমিয়ার লিগ আর হালের লিস্ট ‘এ’ - যাই বলা হোক না কেন, কোনো ব্যাটসম্যানের পৌনে পাঁচশো গড়! অভাবনীয়। সে দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন নাসির। ব্যাট হাতে দুটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফ সেঞ্চুরি।

পাশাপাশি বোলিংয়েও কম যাচ্ছেন না নাসির। এখন পর্যন্ত লিগে তার উইকেট সংখ্যা ১১ টি। মোট কথা, ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স আর সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া- ফিনিশার থেকে সফল অধিনায়কত্বের প্রতিমূর্তি।

Advertisement

আবাহনীকে হারানোর পর মুঠোফোনে জাগো নিউজের ফোন- নিজের এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স আর দল শিরোপার দোরগোড়ায়- কেমন লাগছে ? নাসিরের জবাব, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। আমি খুব উপভোগ করছি। আমরা শিরোপার খুব কাছাকাছি। শেষ ম্যাচ জিতলে কোনো রকম হিসাব-নিকাশ ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। যদি হতে পারি তাহলে অধিনায়ক হিসেবে আমার জীবনে একটা অন্যরকম প্রাপ্তি হবে। কারণ এর আগে অধিনায়কত্ব করলেও আমার নেতৃত্বে কখনো দল প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি। আমি অধিনায়ক হিসেবে লিগ শিরোপা পাইনি কোনোদিন। আশায় আছি, প্রথমবার সে অধরা স্বাদ নিতে।’

এবারের লিগে আবাহনী সবচেয়ে বেশিবার ৩০০ করেছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দেশের বাইরে। তারপরও লিটন দাস, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাদমান ইসলাম, শুভগত হোম ও মিঠুনের মতো একঝাঁক মেধাবী তরুণ ব্যাটসম্যান যে দলে, তাদের দেড়শোর ঘরে (১৫৬ তে) অলঅাউট করে দেয়াই সাফল্যের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া। সেই মিশনে নাসির নিজেও রেখেছেন অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা। তবে কি প্রথম সেশনেই জয়ের ভিত গড়ে উঠেছিল? অাবাহনীকে অত কম রানে বেঁধে ফেলেই কি জয়ের সুঘ্রাণ পাচ্ছিলেন? নাসিরের জবাব, ‘না। আবাহনীকে দেড়শোর ঘরে বেঁধে রাখার পরও মনে হয়নি আমরাই জিতে গেছি। আর খেলার চালচিত্র যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন আমরাও কিন্তু সহজে জিতেনি। আমার দলের অবস্থা তত ভালো ছিল না। ওই রান করতে আমাদের জিততে কষ্ট হয়েছে।’

সাফল্যের পেছনে তার নিজের ভূমিকা অনেক। সাত ইনিংসে একবার মাত্র আউট হয়েছেন। আর অন্তত পাঁচ ম্যাচে দলের জয়ে একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক জোড়া ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিও আছে। কিন্তু জাগো নিউজের সাথে লিগ যাত্রা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একবারের জন্য নাসির তা মুখেও আনলেন না। বরং পুরো দলকেই কৃতিত্ব দিলেন বেশি।

তার কথা, ‘আমাদের দলে শুভ ভাই (সোহরাওয়াদী শুভ) নাদিফ ভাই (নাদিফ চৌধুরী), অমি ভাইদের (জহুরুল) মতো সিনিয়র ও অভিজ্ঞ প্লেয়ার বেশি । সাথে সৌরভ (মমিনুল হক) ও বিজয়ের (এনামুল হক) মতো পরিণত পারফরমার রয়েছে। সব মিলে আমাদের দলটাই ভাল।’ প্রতিপক্ষ আবাহনী সম্পর্কে নাসিরের মূল্যায়ন, ‘আবাহনীতে বর্তমান প্রজন্মের বেশ কজন ভালো ও মেধাবী ব্যাটসম্যান আছে। তবে তাদের বেশির ভাগই সবে অনূর্ধ্ব-১৯ এর গণ্ডি পেরিয়ে এসেছে। তাই হয়তো একটু অভিজ্ঞতা কম। বিগ ম্যাচে অভিজ্ঞতা অনেক কাজে লাগে। অভিজ্ঞ ও পরিণত প্লেয়ার বেশি থাকায় আমরা সে সুবিধা পেয়েছি।’

Advertisement

এআরবি/এনইউ/পিআর