খেলাধুলা

যে কারণে হারল বাংলাদেশ

৪৪.৩ ওভারে তামিম যখন আউট হলেন, তখন বাংলাদেশের রান ২৬২। তখনো ৩৩ বল বাকি। হাতে ৭ উইকেট। এই জায়গা থেকে একটা শতভাগ ব্যাটিং উইকেটে কত হওয়া উচিত?

Advertisement

না হলেও আরও ৬০ প্লাস রান। তাহলে রান দাড়ায় ৩২৫ প্লাস। সেখানে বাংলাদেশ গিয়ে থামলো ৩০৫-এ। শেষ ৩৩ বলে ৭ উইকেট হাতে থাকা মানে ইচ্ছে মত ব্যাট চালানোর অবারিত সুযোগ। কেউ একজন ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১৫-২০ বলে ৩৫ থেকে ৪০ করে ফেলবে আর বাকিরা ১০০ থেকে ১২৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও ৬০ রান খুব সহজেই হয়ে যায়। সেখানে শেষ অংশে বাংলাদেশ করতে পারল মাত্র ৪৩।

এই যে ২০ রানের ঘাটতি, শেষ পর্যন্ত এটাই ভোগালো টিম বাংলাদেশকে। যদিও শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড অনায়াসে ৩০৫ টপকে যাওয়া দেখে কেউ কেউ ফোড়ন কাটছেন, ৩২৫ কেন, সাড়ে তিনশো করলেও বাংলাদেশ জিততো কি না সন্দেহ!

তা জিততো কি জিততো না, সেটা নিয়ে একটা ছোট-খাট বিতর্ক হতেই পারে। তবে কঠিন সত্য হলো, তামিম ইকবালের দায়িত্ব সচেতন সেঞ্চুরি আর মুশফিকুর রহীমের সাথে তার সঙ্গে মিলে ১৬৬ রানের জুটিতে দারুণ মজবুত অবস্থায় পৌঁছেও বাংলাদেশ যতদুর যাবার কথা ততদুর যেতে পারেনি। সেই যেতে না পারায় রান কম হয়েছে। সেই কম হওয়ার পিছনে কাউকে দায়ী করা যায় না।

Advertisement

যদি কাউকে দায়ী করতেই হয়, তাহলে করতে হবে মুশফিকুর রহীমকে; কিন্তু তিনিও  কম করেননি। তামিম ইকবালের সাথে বিশাল পার্টনারশিপে মুশফিকের অবদানও কম নয়। কাজেই তাকে দায়ী করার আগে দশবার ভাবতে হবে।

তবে হ্যাঁ, দলকে এগিয়ে দেবার পাশাপাশি মুশফিক বড় ইনিংস খেলেছেন সত্য; কিন্তু শেষ দিকে করণীয়টা করে আসতে পারেননি। তামিম আউট হওয়ার পর তার একমাত্র কাজ ছিল ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে আসা। একজন সেট ব্যাটসম্যান একদিকে থাকলে অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানের ইচ্ছেমত ব্যাট চালনো সহজ হয়।

কিন্তু সাকিব, মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেক সেই সুযোগ পাননি। তামিম আউট হওয়ার ঠিক পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট মুশফিকও। এই জায়গাতেই একটা ধাক্কা এসে লাগলো। সেই ধাক্কায় ছন্দপতন।

সাকিব (৮ বলে ১০) ঝড়ো ইনিংস খেলতে পারলে হতো; কিন্তু তা আর হলো কই? মাহমুদউল্লাহ (৬ বলে ৮) তেমন সুযোগই পাননি। তবুও রক্ষা, সাব্বির ১৬০ স্ট্রাইক রেটে ১৫ বলে ২৪ করে দিয়েছিলেন। তা না হলে রান ২৯০ পার হতো কিনা সন্দেহ।

Advertisement

এই যে অন্তত ২০ থেকে ২৫ রান কম হওয়া, তাতেই উজ্জীবিত ইংলিশরা। তাদের ভালই জানা এ উইকেটে, ৩০০ বা তার আশপাশের স্কোর তাড়া করা যায়। আর শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো।

কোনোরকম বাড়তি তাড়াহুড়ো না করে তামিম আর মুশফিক যেমন খেলেছিলেন ঠিক সেই অ্যাপ্রোচে খেললেন আলেক্স হেলস আর জো রুট। হেলস শতরানের খুব কাছ থেকে বিদায় নিলেও জো রুট ঠিকই সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন।

শুধু শতরান করেই দায়িত্ব শেষ করেননি এ টপ অর্ডার। ১২৯ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৩৩ রানে নট আউট থেকে দল জিতিয়েই ফিরলেন সাজঘরে। সেখানে সঙ্গী হলেন আরও একজন; ইয়ন মরগ্যান। ইংলিশ অধিনায়ক খেললেন ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস।

হেলস আর রুটের জুটিতে তৈরি হয় সাজানো বাগান। সে বাগানেই শেষ দিকে যখন রুট ঝড়ের গতিতে ব্যাট ছালালেন, তাতেই ইংল্যান্ড আরও সহজে এবং দ্রুত জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেল। ইংলিশ অধিনায়কের ৬১ বলে ৭৫ রানের হার না মানা ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত খেলাকে একপেশে করে দিল।

বাংলাদেশের ২৫ রানের আফসোসের সাথে যোগ হলো আরও একটি অদুরদর্শিতা। ব্যাটিং অর্ডার লম্বা করতে গিয়ে বাদ দেয়া হলো মেহেদী হাসান মিরাজকে। ইংলিশ কন্ডিশনে সাব্বিরের অতি আক্রমনাত্মক ব্যাটিং কাজে দিতে নাও পারে। এই চিন্তায় ইমরুল কায়েসকে তিন নম্বরে খেলানো হলো।

সাব্বিরকে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য নিচে নামিয়ে দেয়া হলো। সেটা ক্রিকেটীয় যুক্তিতে হয়তো খারাপ নয়। কারণ ইংলিশ কন্ডিশনে শুরুতেই ইচ্ছেমত খেলা কঠিন। একটু সেট হয়ে ইনিংসকে সাজাতে হয়। তারপর সেট হলে মারা যায়। তামিম, হেলস ও রুট সেভাবে খেলেই বড় ইনিংস সাজিয়েছেন।

কিন্তু ইমরুল কিছুই করতে পারেননি। যেহেতু তার বোলিংটাও নেই। তাই তাকে খেলানো বিফলে গেছে। একজন বোলারের অভাব বোধ হয়েছে খুব। মিরাজ থাকলে ১০ ওভার বল করতেন। সেই কোটা পূরনের জন্য মোসাদ্দেক ৭.২ ওভার (দিয়েছেন ৪৭ রান), সৌম্য (২ ওভারে ১৩) আর সাব্বিরকে (১ ওভারে ১৩) ব্যবহার করা হয়েছে।

লেগস্পিনার সাব্বির হেলসের উইকেট পেলেও বাকি দুজন কিছুই করতে পারেননি। মোদ্দা কথা মিরাজ বা সানজামুল না থাকায় পঞ্চম বোলারের কাজটি যাদের দিয়ে পুরণের চেষ্টা হয়েছে, তারা দিয়েছেন ৭৩ রান। ওই জায়গায় মিরাজ খেললে হয়ত এত রান দিতেন না। তাতে ইংলিশদের ওভার পিছু রান করার তাড়ার পরিমাণ বাড়তো।

ওদিকে আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু সাকিব আরও একবার হতাশায় ডুবিয়েছেন। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সমীহ আদায় বহুদুরে থাক; সাকিব প্রচুর আলগা বল করে মার খেয়েছেন।  স্পিন ট্রাম্প কার্ডের ৮ ওভারে উঠেছে ৬২ রান।

আর তাতেই সম্ভাবনার প্রদীপ গেছে নিভে। ইংলিশরা ১৬ বল আগেই তুলে নিয়েছে জয়। যদিও ৮ উইকেট হাতে ছিল, তারপরও টার্গেট ৩০৫-এর বদলে ৩২৫ প্লাস করতে পারলে আর মিরাজ থাকলে হয়তো চিত্রটা ভিন্নও হতে পারতো।

এআরবি/আইএইচএস