সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানি শেষ হয়েছে আজ। শুনানি শেষে মামলায় রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন আদালত।
Advertisement
১১তম কার্যদিবসে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপিল শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) করে আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। দিনের শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বক্তব্য রাখেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তার পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বেলা সোয়া ১টার দিকে মামলাটি সিএভি রাখেন আদালত।
Advertisement
গত ৩০ মে দশম দিনের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন। যার মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য আদালত ১২ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১২ জনের মধ্যে ১০ জন আদালতে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত হলেও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি।
বক্তব্য প্রদান করা ১০ জনের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। বাকিরা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেওয়া ৯ আইনজীবী হলেন- ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এম আই ফারুকী এবং এ জে মোহাম্মদ আলী।
গত ২৪ মে এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য প্রদান শুরু হয়, যা গত মঙ্গলবার শেষ হয়। অ্যামিকাস কিউরিদের বাইরে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বক্তব্য রাখেন। তিনি হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে থাকা কিছু বিরূপ মন্তব্য প্রত্যাহারে আদালতের কাছে আর্জি রাখেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারিত হয়েছিল।
Advertisement
এর আগে, গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায় আদালতে পড়ে শোনান। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ২১ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।
পরে ২১ মে তৃতীয় দিনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন মুরাদ রেজা। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই মামলার শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার ১১তম কার্যদিবসে এসে সেই শুনানি সমাপ্ত হলো।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫ মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।
এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের রায় প্রকাশিত হয় গত ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেওয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।
এফএইচ/এআরএস/আরআইপি/জেআইএম