মন খারাপ হলে মানুষ কি করে? এক কথায় উত্তর দেয়া কঠিন। একেকজনের প্রবৃত্তি একেক রকম। তাই হতাশা দুঃখ- বেদনা আর যন্ত্রণা কাটাতে একেক জনের চেষ্টাও ভিন্ন। কেউ গান শোনেন। কেউ টিভিতে প্রিয় অনুষ্ঠান কিংবা পছন্দের মুভি দেখেন। কেউ আবার বাইরে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। কেউবা প্রিয়জনের সান্নিধ্যে চলে যান।
Advertisement
ক্রিকেটাররা খারাপ সময়ে কি করেন? সেটাও একেক জনের একেক রকম। কেউ বই পড়েন। নামী ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী পাঠ করে নিজেকে শোধরানোর ও গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পুরো দল যদি হতাশাগ্রস্ত থাকে তাহলে, সে হতাশা কাটানোর মোক্ষম দাওয়াই কি?
কোন বড় ক্রিকেট পন্ডিতের সরণাপন্ন হবার দরকার নেই। ক্রিকেটার ও ক্রিকেট দল হতাশা কাটিয়ে সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা হয় নিজেদের সাফল্যের স্মৃতিচারণ করে। খারাপ সময় পিছনে ফেলে আসা সোনালী দিনগুলোয় ফিরে যাওয়া যায়।
স্মৃতির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সুখ স্মৃতিগুলোকে রিওয়াইন্ড করলেই ব্যাস মন ভাল হয়ে যাবে। ফুরফুরে মেজাজ চলে আসবে। মনের কোনে জমে থাকা মেঘ সওে তার বদলে আবার অনুপ্রেরণা ও উদ্যম এসে বাসা বাধবে।
Advertisement
গতকাল (৩০মে) ভারতের বিপক্ষে গা গরমের ম্যাচে খুব বাজেভাবে হারের পর ঠিক এভাবেই নিজেদের আবার চাঙ্গা করতে পারে মাশরাফির দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী দিন মাঠে নামার আগে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হবার বড় উপাদান তাদের হাতের কাছেই। কাল ১জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাশরাফি বাহিনীর প্রথম খেলা স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
ইতিহাস জানাচ্ছে যে দলটির সাথে আইসিসি ইভেন্টে টাইগারদের সাফল্যের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। সর্বশেষ দু’দুটি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড পারেনি বাংলাদেশের কাছে। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে হেরেছে ২ উইকেটে। আর ২০১৫ সালের ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে ১৫ রানের দারুণ জয়ে মাঠ ছেড়েছে মাশরাফির দল।
এরপর আরও তিনবার মুখোমুখি হয়েছে টাইগার ও ইংলিশরা। দেশের মাটিতে হওয়া ওই তিন ম্যাচের সিরিজে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২-১ এ হারলেও দ্বিতীয় খেলায়ও ৩৪ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
কাজেই বৃহস্পতিবার ওভালে যখন এই দুই দল মাঠে নামবে তখন, মানসিক দিক থেকে অবশ্যই খানিক উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত থাকবে মাশরাফি বাহিনী। আমরা দেশে ও বিদেশে ইংলিশদের সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে হারিয়েছি। সেটাও ছিল আইসিসি ইভেন্ট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও আইসিসি ইভেন্ট। তার মানে আইসিসির কোন আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে আমরাই ফেবারিট।
Advertisement
মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা এমন ভাবতেই পারেন। এছাড়া দু’দেশের শেষ সিরিজেও আমরা এক বার হারিয়েছি ইংলিশদের। সেটাও খুব বেশি দিন আগে নয়। এই মাত্র সাত মাস আগে; ২০১৬ সালের অক্টোবরে।
অর্থাৎ ইংলিশদের সাথে নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময় জয়-পরাজয়ের অনুপাতে মোটেই পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বরং এগিয়ে। এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা। আর তাই শক্তি ও সামর্থ্যে কাগজে কলমে ইংলিশরা এগিয়ে থাকলেও মনের দিক থেকে এগিয়ে টাইগাররা।
শুধু তাই নয়, গত দুই বছর অনেক ভাল ক্রিকেট উপহার দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া প্রায় সব বড় শক্তিকে হারানোর কৃতিত্বও আছে টাইগারদের। মাশরাফির সাহসী আর উজ্জীবিত নেতৃত্বে, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমানরা গত দুই বছর বিশ্বের সব বড় শক্তির ভীত কাঁপিয়ে ছেড়েছেন। সেই সাফল্যে ঘেরা ম্যাচগুলোর সুখ স্মৃতিও তাদের বড় আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের জায়গা।
আগামীকাল ওভালে স্বাগতিক ইংলিশদের মুখোমুখি হওয়ার আগে আজ পুরোপুরি বিশ্রামে ছিল টিম বাংলাদেশ। শুধু অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অফিসিয়াল প্রেস মিটে এসেছিলেন কথা বলতে। জানা গেছে, টাইগার ক্যাপ্টেন কথা বার্তায় বেশ সাবলীল ছিলেন। বরাবরের মত স্বদেশি সাংবাদিকদের সাথে রসিকতাও করেছেন।
কথোপকোথনের এক পর্যায়ে বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, আওেগর দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের কোনরকম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ সবাই জানে ওটা নিছক প্রস্তুতি ম্যাচ। মাশরাফির শেষ কথা, ‘নিজেদের মাঠে ইংলিশরাই ফেবারিট। তবে চাপটা তাদের ওপরই বেশি।’
টাইগার অধিনায়ক আরও এক কারণে চাঙ্গা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গত বছর ৯ অক্টোবর শেরে বাংলায় জয়ের নায়ক ও রূপকার তিনি। ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরমেন্সে শুধু দলকেই জেতাননি, ২৯ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর ২৯ রানে ৪ উইকেট দখল করে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও পান নড়াইল এক্সপ্রেস।
এদিকে ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের কাছে হারের পর থেকেই বদলে গেছে ইংল্যান্ড দলের চেহারা। প্রথাগত ব্যাকরণ সম্মত ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক এখন ইংলিশরা।
ইয়ন মরগ্যান আর জো রুট দলটির প্রধান ব্যাটিং স্তম্ভ। তাদের হাত ধরে গত দুই বছরে একদিনের ক্রিকেটে দু’বার ৪০০‘র ঘরে স্কোর করার রেকর্ড আছে ইংল্যান্ডের। বেন স্টোকস দলটির নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। তাদের সাথে ক্রিস ওক্স, মইন আলি ও আদিল রশিদ ইংলিশদের বড় সম্পদ। সব মিলে দারুণ এক ওয়ানডে দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন।
তারপরও ইংলিশরা খানিক চাপে। দেশের মাটিতে এত বড় বিশ্ব আসরের প্রথম খেলা। তাও এমন এক দলের সাথে, যাদের বিরুদ্ধে ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বিপক্ষে। যদিও মাঝে চার বছরের ব্যবধান। তারপরও শেষ দুই আইসিসি বিশ্বকাপে তারা পারেনি বাংলাদেশের কাছে। সেই না পারায় আত্মবিশ্বাসের জায়গায় কোথায় যেন একটু কমতি ইংলিশদের! এই একটি জায়গাতেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি