ধর্ম

আজকের তারাবিতে রয়েছে মুমিনদের জন্য সান্ত্বনা ও সুসংবাদ

আজ রমজানের ৫ম তারাবিহ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের তারাবিতে পাঠ করা হবে দেড় পারা অর্থাৎ সুরা মায়িদার ৮৩নং আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা আনআমসহ সুরা আ’রাফের ১১নং আয়াত পর্যন্ত।

Advertisement

এ আয়াতগুলোতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসহ তাওহিদ রেসালাত এবং পরকালের বিশ্বাস, বিশ্বনবি ও মুমিন মুসলমানের জন্য রয়েছে সান্ত্বনা এবং সুসংবাদ।

সুরা মায়িদাকুরআনুল কারিমের ৫ম সুরা ‘সুরা মায়িদা’। এর আয়াত সংখ্যা ১২০ রুকু সংখ্যা ১৬। সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর ৬ হিজরির শেষের দিকে অথবা ৭ হিজরির প্রথম দিকে এ সুরাটি নাজিল হয়। আজ এ সুরার ৮২ থেকে শেষ আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে।

আয়াত ৮৩ থেকে ১২০কুরআনের সাত নম্বর পারার শুরুতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বিষয় উল্লেখের মাধ্যমে শুরু করেছেন। যারা কুরআন অবর্তীণ হওয়ার তা মেনে নিয়ে সত্যের সাক্ষী প্রদানকারীদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আবেদন করেছে।

Advertisement

মুমিন বান্দার পুরস্কার এবং অবধ্যতাকারীদের পরিণাম আলোচনার পর শপথের কাফফার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন সুরা মায়িদার ৮৯নং আয়াতে।

আজকের তারাবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান ঘোষিত হবে মদ-জুয়া ও মূর্তিপুজারীদের বিষয়ে। এ সুরার ৯০ ও ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, ভাষ্কর্য, প্রতিকৃতি ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ সৃষ্টি করতে চায়, জিকির ও নামাজ থেকে তোমাদের দূরে রাখতে চায়। তবে কি তোমরা বিরত হবে না?’

আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশে মুসলমানদের উপদেশ প্রদান, ন্যায় ও ইনসাফ ও ভারসাম্যের রীতিনীতি অবলম্বনের বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি আল্লাহর হুকুম আনুগত্য মেনে চলার প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে।

Advertisement

সুরাটির শেষ দিকে ইয়াহুদি খ্রিস্টানদের উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইয়াহুদির শক্তি খর্ব করে মুসলিম সম্প্রদায়ের শক্তি বৃদ্ধি এবং ইসলামের সঠিক নীতি অবলম্বন করে পূববর্তী কিতাবের নীতি পরিহারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সর্ব শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বিধান পালনকারীদের প্রতি সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। মুমিনরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন। যাকে ইসলামে সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা আনআমসুরা আনআম কুরআনুল কারিমের ৬নং সুরা। সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। ২০ রুকুতে ভাগ করা সুরাটির আয়াত সংখ্যা ১৬৫।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষের নিকট ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কাজ শুরু করেছিলেন তারপর ১২টি বছর অতিবাহিত হয়। এ বছরগুলোতে কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতা জুলুম অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌছেছিল।

ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি দল কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেশত্যাগ তথা হিজরতে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্বনবিকে সহযোগিতার জন্য তখন হজরত খাদিজা ও আবু তালিব কেউ তখন জীবত ছিলনা। চরম প্রতিকূলতাপূর্ণ মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা মক্কায় এ সুরা নাজিল করেন।

এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-শিরকের খণ্ডন করে তাওহিদের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং দুনিয়ার জীবনটা যে সবকিছু নয় এ চিন্তার অপনোদন করা।

জাহেলিয়াতের অলিক কাল্পনিক বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিশ্বাসী মানুষের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করা।

যে সব বড় বড় নৈতিক বিধানের ভিত্তিতে ইসলাম তার সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে চায় সেগুলোর শিক্ষার গুরুত্বের আলোচনা।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত ও তাওহিদের দাওয়াতের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিষয়ের জবাব প্রদান।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ পরিশ্রম ও অক্লান্ত চেষ্টা সাধনায় যখন ইসলামের প্রচার ও প্রসার ফলপ্রসু হচ্ছে না তখন প্রিয়নবি ও মুসলমানদের হতাশা ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে এ সুরায়।

সুরা আ’রাফমক্কায় নাজিল হওয়া সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২০৬ ও ২৪ রুকুতে ভাগ করা। এ সুরার ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতে আসহাবে আ’রাফের উল্লেখ করা হয়েছে। সে কারণে এ সুরার নাম করণ করা হয়েছে সুরা আ’রাফ। আজকের তারাবিতে এ সুরার প্রথম ১১ আয়াত পাঠ করা হবে।

এ সুরাটিও সুরা আনআমের সমকালীন সময়ে নাজিল করা হয়েছে। তবে এ সুরায় বিশ্বনবির রিসালাতের প্রতি ঈমানের ব্যাপারে তাগিদ করা হয়েছে। এ সুরায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আনুগত্য করার জন্য বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ করাই হলো সুরার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝে বাস্তব জীবনে আমল করার তাওফিক দান করুন। তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতের বিষয়ে সর্বোচ্চ ধৈর্যধারন ও ত্যাগের গুণাবলী অর্জন করে কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম