জাতীয়

আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে উপকূলের লাখো মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ইতোমধ্যে উপকূলে কিছুটা আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা অপ্রতুল হলেও উপকূলের অধিকাংশ আশ্রয় কেন্দ্র এখনো ফাঁকা রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে বাইরে রয়েছেন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলার ১৪৭টি উপজেলা রয়েছে। ১৩ হাজার ৫১৩ কিলোমিটার আয়তন বিস্তৃত এই অঞ্চলটিতে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। এসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে কয়েক হাজার। তবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেও এসব আশ্রয়কেন্দ্রের অধিকাংশই ফাঁকা। সোমবার দিনগত রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও সকালে অনেকেই ঘরে ফিরে গেছেন। আবার অধিকাংশ এলাকায় সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে স্থানীয় বাসিন্দারা যাননি।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অফিসের একজন পরিচালক ব্রিফিংয়ে জানান, ঘূর্ণিঝড়টির মাত্র অগ্রভাগ টেকনাফ ও কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে। এখনো পুরোদমে আঘাত হানেনি। এটি কক্সবাজার থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ঝড়ের ফলে উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

উপকূলীয় অঞ্চল নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য ১৬০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তবে এসবের অধিকাংশ কেন্দ্রে চলছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। আবার যে কয়েকটি খুলে দেয়া হয়েছে সেগুলোতে মানুষ আশ্রয় নেননি।

Advertisement

এ উপজেলার সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, তিনি ও তার আশেপাশের সবাই নিজ নিজ বাড়িতে রয়েছে। কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়নি।

একই অবস্থা লক্ষ্মীপুরেও। জেলা দুটি উপজেলার রামগতিসহ কয়েকটি চরের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রলার ও নৌকা পাঠানো হলেও কয়েক হাজার মানুষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন মাত্র ২০০ জন।

উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের খুলনাঞ্চলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার সকালে জাগো নিউজকে জানান, ৮ নম্বর সতর্ক সংকেত পেয়ে খুলনার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ অবস্থান নিলেও আজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা অনুযায়ী এখনো বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলের চর ও দ্বীপাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনো উপকূলের লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রের বাহিরে রয়েছেন। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জনপদে বেড়িবাঁধের বাহিরে এখনো শতশত বাসিন্দারা তাদের কুঁড়ে ঘরে অবস্থান করছেন।

Advertisement

তাদের দাবি, প্রাকৃতিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলা করার মত তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ আঘাত হানলে ঘরবাড়ি ছেড়ে বড়জোর বেড়িবাঁধের ভেতরে চলে যাবেন।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে (১৬) বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় কুতুবদিয়ার নিকট দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর মো. বাহার উদ্দিন বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া ঝড় পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এমএসএস/আরএস/এমএস