আইন-আদালত

আমাকে থাপ্পড় মেরে, অন্যদেরও নির্যাতন শেষে ছেড়ে দেয়

একাত্তরে মক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী রঞ্জিত ভট্টাচার্য জবানবন্দি পেশ করেছেন।

Advertisement

সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করার জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।

জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়। এরপর আমাকে, আমার বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য, জেঠাত ভাই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তার ছেলে মনেন্দ্র ভট্টাচার্যকে ধরে নিয়ে যায়। থাপ্পড় মেরে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে অন্যদেরও নির্যাতন শেষে ফেরত দেয়া হয়।

সোমবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। আদালতে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মো. সিমন, প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার।

Advertisement

সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার নাম রঞ্জিত ভট্টাচার্য। বর্তমানে বয়স আনুমানিক ৭৭ বছর। গ্রাম- উত্তরভাগ। থানা- রাজনগর, জেলা মৌলভীবাজার। ১৯৭১ সালে আমি চাঁনভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম। বর্তমানে অবসর গ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আসামি মো. উজের আহম্মেদ ও আসামি মো. নেছার আলীসহ কয়েকজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে লুটপাট করে। এরপর আসামি ও রাজাকাররা আমাকে, আমার বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য, আমার জেঠাত ভাই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তার ছেলে মনেন্দ্র ভট্টাচার্যকে আটক করে বেঁধে উত্তর দিকে হাজি নছিব আলীর (বর্তমানে মৃত) বাড়ির দিকে রওনা হয়। নছিব আলী ছিল উত্তরবাগ ইউনিয়নের শান্তি কমিটির কনভেনর।’

‘আমাদের বাড়ির বাইরে পুকুরপাড়ে যাওয়ায় পর আসামি মো. নেছার আলী ও আসামি মো. উজেব আহম্মেদ চৌধুরী আমাকে চর-থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দেয়। বাকি তিনজনকে নিয়ে যায়। আমি তারপর আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ কুতুব আলীর (বর্তমানে মৃত) বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাকে উল্লেখিত ঘটনা বলি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি নছিব আলীর বাড়িতে যাব, তুমি তোমার বাড়িতে চলে যাও।’

‘ওই দিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে আমি বাড়িতে ফিরে আসার পথে দেখি, ১০ থেকে ১২ জন পাকিস্তানি আর্মি নছিব আলীর বাড়ি থেকে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (বর্তমানে) ও মনেন্দ্র ভট্টাচার্য (বর্তমানে মৃত) আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের নিকট আমি আমার ভাই রসরাজ ভট্টাচার্যের খবর জানতে চাইলে তারা জানায়, তিনি আসবেন কিনা জানি না।’

Advertisement

সাক্ষী বলেন, ‘ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টার দিকে হঠাৎ দেখি আমার ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য (বর্তমানে মৃত) বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তিনি ফিরে এসে জানান, তিনি পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারদের নিকট মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবেন মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করলে তারা তাকে ছেড়ে দেন। আমরা বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য ২০১৬ সালের নভেম্বরে মারা যান। আমার বর্ণিত দুজন আসামি আমাদের স্থানীয় বিধায় তাদের আগে থেকে চিনতাম। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমি বর্তমানে চোখে ভালো দেখি না।’

এফএইচ/জেডএ/এমএআর/জেআইএম