বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও উত্তর দিকে সরে বাংলাদেশ উপকূলের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Advertisement
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর এই নির্দেশ জারি করা হয় বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন।
এদিকে এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর কক্সবাজার উপকূল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ক্ষতবিক্ষত থাকা উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন কিংবা পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জরুরি বৈঠকে বসে জেলা প্রশাসন।
Advertisement
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে বৈঠকে জিও, এনজিও এবং জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের সর্ব স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেন।
বৈঠকে কুতুবদিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজুম, সদরের পোকখালী, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল, পেকুয়ার রাজাখালী, উজানটিয়া, মগনামা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্টমার্টিন ও বাহারছড়া ইউনিয়নের লোকজনকে বিকেলের আগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এসময় জেলার সকল সাইক্লোন শেলটার সেন্টার ও উপকূলের স্কুল ভবনগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা করারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় `মোরা` আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
Advertisement
৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মানে হলো, সাগরে মাঝারি শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে, যেখানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্র বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷
৫ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা ৭ নম্বরের সমান তবে দিক ভিন্ন। অর্থাৎ সরাসরি পায়রা ও মংলার দিকে না এসে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে এই দুই বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর রোববার মধ্যরাতে সেটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী তখন এর নাম দেয়া হয় ‘মোরা’ (MORA)।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল জানান, ‘মোরা’ থ্যাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নাম। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পরপরই সমুদ্র বন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়। পরে ভোর ৬টায় সঙ্কেত বাড়িয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং ৯টায় বিপদ সংকেত জারি করা হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং পরদিন তা ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’য় রূপ নেয়। পরে সেটি দক্ষিণপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/আরআইপি