জাতীয়

ল্যাব-ক্ষমতা না থাকলেও হালাল সনদ দিচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিজস্ব ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) নেই। নেই আইনত ক্ষমতাও। তবুও হালাল পণ্যের সনদ দিচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত পাঁচ বছরে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে হালাল সনদ দিয়েছে এই ফাউন্ডেশনটি। আর এতে প্রায় ১০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। তবে হালাল সনদ দেয়ার আইনত কোনো বৈধতা নেই তাদের।রোববার নিজ কার্যালয়ে নিজেদের ‘অনুমোদিত’ সংগঠন ঘোষণা করতে এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সেখানে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল দাবি করেন, ২০১৩ সালের আগস্ট মাসের বোর্ড অব গভর্নরসের ১৮৯তম সভায় হালাল সনদ আইন ও নীতিমালা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন নিজেদের কমিটির মাধ্যমে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করবে।এছাড়াও ডি-৮ দেশসমূহের (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন হালাল সনদ দেয়ার অনুমতি পেয়েছে বলে জানান তিনি।তবে নিজেরা ‘অনুমোদিত’ তা প্রমাণ করতে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারেনি ফাউন্ডেশনটি। নিজেদের ল্যাব নেই বলে সনদ প্রদানের জন্য তারা মাননিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর (বিএসটিআই, বিসিএসআইআর) রিপোর্টের উপর নির্ভরশীল।বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. খিজির হায়াত খান। তিনি জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো ল্যাব নেই। তবে ফাউন্ডেশনের ৬০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে। রয়েছে সরকারিভাবে অনুমোদিত ও বেতনভুক্ত মুফতি, মুফাসসির এবং মুহাদ্দিস। তারা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে কোরআন-হাদিসের বর্ণিত মানদণ্ড অনুযায়ী সনদ দেয়া হয়।এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিএসটিআই এবং অন্যান্য ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে পণ্যের যাচাইকরণ রিপোর্ট সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে। আইন অনুযায়ী ইসলামিক ফাউন্ডেশন সনদ দিতে পারে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, পণ্যের মাননিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) সরকার অনুমোদিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ল্যাব নেই, সরকারি অনুমোদন নেই। তারা সনদ দিতে পারে না। এটা কর্পোরেটদের একটি মার্কেটিং কৌশলমাত্র। আর এ কৌশল বাস্তবায়নে তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ব্যবহার করছে।সম্প্রতি ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হালাল সনদ প্রদানের কোনো বিধান নেই’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের বিপরীতে নিজেদের ‘সাফাই’ গাইতে রোববার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তারা।এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশ হালাল সনদ নীতিমালা’ ও ‘বাংলাদেশ হালাল সনদ আইন-২০১২’ নামে খসড়া দুটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে আইন ও নীতিমালার অনুমোদন মেলেনি এখনো।সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ‘অনধিকার চর্চা’ ঢাকতে হালাল সনদ প্রদানে দেশের উন্নয়নের দিকটি তুলে ধরেন মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল। তিনি বলেন, বিশ্বে প্রায় ১৫৮টি দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। হালাল সনদ দিয়ে দেশের হালাল পণ্যগুলোকে বিদেশে রফতানি করলে গার্মেন্টস সেক্টর থেকেও বেশি রেমিটেন্স আসা সম্ভব।এআর/আরএস/বিএ

Advertisement