পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শপিংমলগুলো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা, অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঠে একাধিক টিম নামানোর কৌশল ঠিক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
Advertisement
একই সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শপিংমলসহ ব্যাপক লোকসমাগম হয় এমন স্থানে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ সময় সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে তৎপর থাকার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া নারী ক্রেতা সমাগম বেশি এমন মার্কেটগুলোতে হয়রানি ও ইভটিজিং রোধে বিপুল সংখ্যক মহিলা পুলিশ মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রমজান ও ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এরপর ডিএমপি সদর দফতরেও এ বিষয়ে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
Advertisement
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো হলো- যেকোনো মূল্যে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখা; সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইকসহ সব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা করা; সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া যানবাহন তল্লাশির নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা; মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ ও যানজট নিরসনে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পবিত্র রমজান ও ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে সকল স্তরের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধান।
এ বিষয়ে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, শুধু চাঁদাবাজ নয় নিজ বাহিনীর (পুলিশ) কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, রমজানে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয় একই সঙ্গে ট্রেন, বাস ও লঞ্চের নিরাপদ চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ জামায়াতের নিরাপত্তা ও জাল টাকার অপব্যবহার রোধ; চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পকেটমার ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বড় বড় শহরের বিপণীবিতান ও শপিংমলগুলো যথাসম্ভব সিসি টিভির আওতায় এনে কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও জানান আইজিপি।
Advertisement
পুলিশ প্রধান আরও বলেন, জনসাধারণের কেনাকাটার সুবিধার্থে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত নৈশটহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদ জামাতস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান আইজিপি শহীদুল হক।
সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শপিংমলগুলোতে আগত ক্রেতাদের যাতায়াত সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিংয়ের কথা বলা হয়েছে। এজন্য শপিংমলগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য দোকান মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
শপিংমলে আগত ক্রেতাদের আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শপিংমলগুলোর নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, শপিংমলগুলোর সামনে অবৈধভাবে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না এবং সেখানে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে বা অবস্থান করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রমজান ও ঈদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকরা যেন রাস্তায় নেমে কোনোপ্রকার বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজধানীর গাউছিয়া ও নিউ মার্কেটের মতো বেশি ক্রেতাসমাগম মার্কেটগুলোতে মহিলা ক্রেতারা যেন কোনোপ্রকার হয়রানি বা ইভটিজিংয়ের স্বীকার না হন সেজন্য বিপুল সংখ্যক মহিলা পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
পবিত্র রমজান মাসে ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ফুটপাতে কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট থাকবে না। ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেহেতু ৩৬৫ দিনই পুলিশের পক্ষে পাহারা দেয়া সম্ভব নয় এবং যেসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় সেসব এলাকায় হকারদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমজানে নগরবাসী যেন ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ফের ঘরে ফিরতে পারেন, নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন সে লক্ষ্যে ডিএমপি নগরবাসীর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও শপিংমলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান ও মলমপার্টির সদস্যদের অপতৎপরতা রোধে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি ও টহল অব্যাহত থাকবে।
জেইউ/এমএআর/জেআইএম