দেশজুড়ে

রাজশাহী অঞ্চলে ধানের উৎপাদন বাড়ছে

রাজশাহী অঞ্চলে গত পাঁচ বছরে আউশ ও আমনের আবাদ বেড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৩১ হেক্টর। আর উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ মেট্রিকটন। তবে এ ক’বছরে বোরো আবাদ কমেছে ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর। আর চলতি অর্থ বছর বাদে গত তিন অর্থ বছরে উৎপাদন কমেছে ৩৬ হাজার ১১২ মেট্রিকটন।

Advertisement

দেশের খাদ্য শষ্যের অন্যতম ভাণ্ডার এ অঞ্চল থেকে চাল যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। কৃষিতেই সমৃদ্ধ হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। তবে এবার আকাল বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানের। যেটুকু অবশিষ্ট ধান ঘরে তুলেছেন তাকে কৃষক তার দাম পাচ্ছেন কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতর জানিয়েছে, গত ২০১২-২০১৩ মৌসুমে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আউশ চাষ হয়েছিলো এক লাখ ৪ হাজার ৭৮৪ হেক্টর। এতে ধান উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৮ মেট্রিট টন। একই অর্থ বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪১০ হেক্টরে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন আমন এবং ৩ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৫ হেক্টরে ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৫ মেট্রিকটন বোর ধান উৎপাদন হয়।

এরপর ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে এ চার জেলায় আউশ চাষ হয় এক লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৯ হেক্টর। এতে ধান উৎপাদন হয় ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭০ মেট্রিকটন। ওই অর্থ বছরে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭ হেক্টরে ১১ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন আমন এবং ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৯ হেক্টরে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫৩৩ মেট্রিক টন বোর ধান উৎপাদন হয়।

Advertisement

সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে আউশ চাষ হয় এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর। এতে ধান উৎপাদন হয় ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭ মেট্রিকটন। এ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩০ হেক্টরে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ২০০ মেট্রিকটন আমন উৎপাদন হয়। এছাড়া এবার সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৭১ হাজার ১২৫ হেক্টরে বোর ধান চাষ হয়েছিলো।

কিন্তু অকাল বন্যায় বিল অঞ্চলে ডুবে নষ্ট হয়েছে বোরো ধান। এছাড়া শিলাবৃষ্টিতেও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে ধানের বাজারে। ধানের দাম বাড়ায় বাড়ছে চালের দাম। এক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সবধরনের মোটা চালের দাম।

নগরীর কাদিরগঞ্জের পাইকারি চাল বিক্রেতা আক্তার ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক রিয়াজুল করিম বলেন, গত এক মাসের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম প্রতিবস্তায় দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে চালের বাজার রয়েছে স্থীতিশীল।

গতকাল রাজশাহীতে প্রতিবস্তা আঠাশ (৮৪ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮৫০ টাকায়। একই পরিমাণ মিনিকেট ৪ হাজারে বিক্রি হয়েছে। ৫০ কেজির প্রতিবস্তা বাসমতি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ মিনিকেটের দাম ২৬শ টাকা। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় চালের দাম বাড়ার শঙ্কা নেই বলেও জানান এই বিক্রেতা।

Advertisement

তিনি জানান, তারা জেলার বিভিন্ন এলাকার চালকল থেকে চাল সংগ্রহ করে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করেন। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বাড়তি বলে জানান এ বিক্রেতা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি জেলা খাদ্যশষ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য। রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিমণ ধানের বাজার দর ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা। এর সঙ্গে চালকলের খরচ যুক্ত হচ্ছে আরও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।

ধানের রকমভেদে প্রতিমণে চাল উৎপাদন হয় ২০ কেজি থেকে ২৬ কেজি। এখনকার বাজারে প্রতিকেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা করে। ধানের দাম কমে আসলে চালের দামও কমবে বলে জানান তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/আরআইপি