আন্তর্জাতিক

মসুলে ফিরছে লিপস্টিক

দীর্ঘদিন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দখলে ছিল ইরাকের মসুল শহর। এ সময়টাতে সেখানে কায়েম হয়েছিল ত্রাসের রাজত্ব। সামান্য ভুলের কারণে শিশুদের হত্যা, মানুষকে মারধর, গুম ইত্যাদি পরিণত হয়েছিল নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায়।

Advertisement

সম্প্রতি বিবিসির হাতে আসা কিছু এক্সক্লুসিভ ভিডিও ফুটেজে উঠে এসেছে ওই সময়কার ভয়ঙ্কর নানা চিত্র। গেল জানুয়ারিতে আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে পুনর্দখল হয়েছে মসুল।

আইএসের ভয়াবহতার পাশপাশি ওই ভিডিওতে এও উঠে এসেছে কিভাবে এই শহরের বিদ্যালয় আর ক্যাফেগুলো আবার খুলতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে দোকানগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া পণ্যগুলো।

ইরাকি নিরাপত্তাবাহিনী এই শহরের বেশিরভাগটাই নিজেদের দখলে নিলেও শহরের পশ্চিমাঞ্চলের কিছুটা এখনও জঙ্গিদের কব্জায় রয়ে গেছে।

Advertisement

গেল মার্চে ভিডিও করা ওই ফুটেজে দেখা গেছে কিভাবে মসুলের নারীদের জীবনের কিছু অংশ আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। দোকানগুলোতে আবার ফিরতে শুরু করছে নারীদের নানা রকমের পোশাক, কসমেটিকস। তবে এই শহরের নারীরা এখনও ভুলে যানটি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল তাদের জীবন।

বিবিসিকে মাহা নামে এক নারী বলেছেন, আমি কখনও ওই দিনগুলো ভুলব না। মাত্র সাত বছরের একটা বাচ্চার সঙ্গে রাস্তায় কী করা হয়েছিল সেসব ভোলার নয়।

ছোট্ট মেয়েটা একটা দোকানে মিষ্টি কিনতে গিয়েছিল, সেখানেই তার সামনে এসে দাঁড়ায় আইএস জঙ্গিরা।

মেয়েটা দোকানদারের সঙ্গে কথা বলছিল, আর জঙ্গিরা তাকে জিজ্ঞাসা করছিল তার বাড়ি কোথায়।

Advertisement

একপর্যায়ে মেয়েটার বাবা-মা সেখানে এলে জঙ্গিরা তাদের জ্ঞান দিতে শুরু করেন- এভাবে এই দোকানদারের সঙ্গে একা কথা বলে কিভাবে তাদের মেয়ে শরিয়াহ আইন ভেঙেছে।

নিষ্পাপ এই শিশুটিকে তার শৈশব উপভোগ করতে দেয়া হচ্ছিল না।

লম্বা তর্ক-বিতর্কের পর তারা এই সিদ্ধান্ত দেয় যে, ছোট্ট এই মেয়েটার শাস্তি হবে- তার মুখে বা হাতে হিসবার (ধর্মীয় পুলিশ) নারী সদস্য কামড় দেবে।

বাচ্চাটির মা কান্নাকাটি করে বলছিল, মেয়ের বদলে তাকে শাস্তি দেয়া হোক, কিন্তু আইএসের জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।

এরপর ওই মায়ের সামনেই তার ছোট্ট মেয়েটিকে শাস্তি দেয়া হয়।

আইএসের অত্যাচারে এই শহরের মানুষের জীবনের প্রতিটা দিকই বদলে গিয়েছিল। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শহরের বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শহরের বাসিন্দারা এখন আবার নতুন করে সেখানে ক্লাস শুরুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আহমেদ নামে ২৮ বছর বয়সী একজন বলেছেন, আমি বাইরে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সবসময় আইএসের হাতে মানুষকে শাস্তি পেতে দেখতে দেখতে আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।

তিন বছরের শাসনে অর্থনৈতিক নানা কাজের উপরও প্রচুর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল আইএস। তাদের সময় ব্যবসা বাণিজ্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের উপর অসম্ভব নানা শর্ত আরোপ করা হতো।

মানুষের ঘড়বাড়িসহ বেশ কিছু গির্জা ও মসজিদও ধ্বংস করেছে আইএস। খ্রিস্টানদের বাড়িঘর থেকে লুটপাট করা হয়েছে।

এনএফ/পিআর