দেশজুড়ে

চাল দিতে মিলারদের অনীহা, দাবি পুঁজি নেই

রাজশাহী অঞ্চলে বোরো চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হচ্ছে না মিলাররা। তাদের দাবি, পুঁজি নেই। কিন্তু ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাল দিতে তাদের এ গড়িমসি। ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

Advertisement

জানা গেছে, চাল ক্রয়ে মিলারদের সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ মে। কিন্তু গত ২০ মে পর্যন্ত চুক্তি করেছে মাত্র এক হাজার ৫০ জন। যদিও চুক্তিযোগ্য মিলার রয়েছে ৬ হাজার ২২৬ জন। গত আমন মৌসুমে এদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৫৫ জনই চুক্তি করে সরকারি চাল সরবরাহ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন, নাটোরে ১৩ হাজার ৮২ মেট্রিক টন, নওগাঁয় ৪১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ হাজার ১৫ মেট্রিক টন, পাবনায় ২৪ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন, সিরাজগঞ্জে ১২ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন, বগুড়ায় ৬২ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন এবং জয়পুরহাটে ১৬ হাজার ৬০২ মেট্রিক টন। চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২৩ এপ্রিল থেকে। চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগে চুক্তিযোগ্য মিলার ৬ হাজার ২২৬। গত আমন মৌসুমে ৫ হাজার ৭৭৫টি চুক্তিবদ্ধ চালকল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়। কয়েক দফা বাড়িয়ে ওই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৬ মেট্রিক টন।

Advertisement

তবে এবারের বোরো মৌসুমে চালকলগুলো চুক্তিতে আসতে রাজি হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ধানের বাজার চড়া তাই চালের উৎপাদনে খরচ বেশি। তাতে সরকারকে চাল দিতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হবে তাদের।

জানা গেছে, গত ২০ মে পর্যন্ত বোর মৌসুমে চাল সরবরাহে চুক্তির আওতায় এসেছে এক হাজার ৫০ মিলার। চুক্তিযোগ্য ২১৯ মিলারের মধ্যে রাজশাহীতে চুক্তির আওতায় এসেছে মাত্রা ১৯ মিলার। এছাড়া নাটোরে ৫৫৩ চালকের ৮৫টি, নওগাঁয় এক হাজার ৯৭চালকলের ১৫৮টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯২ চালকলের ২২টি, পাবনায় ৮৭৬ চালকলের ৪৭টি, সিরাজগঞ্জে ৮৪৫ চালকলের ১৫২টি, বগুড়ায় এক হাজার ৯৩৫ চালের ৩৮৩টি এবং জয়পুরহাটে ৫২৫ চালকলের ১৮১টি চুক্তির আওতায় এসেছে।

রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি জেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য। রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি মণ ধানের বাজার দর ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা।

এর সঙ্গে চালকলে খরচ যুক্ত হচ্ছে আরও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ধানের রকমভেদে প্রতি মণে চাল উৎপাদন হয় ২০ কেজি থেকে ২৬ কেজি। এখনকার বাজারে প্রতিকেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা করে। সরকার চাল কিনছে ৩৪ টাকায়। নিশ্চিত লোকসান জেনে তাই চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছে না মিলাররা।

Advertisement

মিলারদের পুঁজি সঙ্কট উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত আমন মৌসুমে মিলাররা রাইস এজেন্সিগুলোকে চাল দিয়ে এখনো দাম পায়নি। এ অর্থ হাতে আসতে আরও তিন-চার মাস লেগে যাবে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সমন্বয় নিয়েও মিলাররা রয়েছে ভোগান্তিতে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাতে না পেরে গুঁটিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। কৃষি পণ্যের ব্যবসা করেও মিলছে না কৃষিঋণ। বাণিজ্যিক ঋণও পাচ্ছেন না। ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছেন এ অঞ্চলের মিলাররা। এ নিয়ে দ্রুত নীতিমালা চাইলেন রফিকুল ইসলাম।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এখন ধান-চালের বাজার চড়া। ধীরে ধীরে তা নেমে আসবে। তখন চুক্তিযোগ্য সব মিলারই চুক্তির আওতায় আসবেন। এ নিয়ে মিলারদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। শেষ পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদী তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/জেআইএম