আইসিসিই অফিসিয়ালি মেইল করে জানিয়েছে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ কয়টা ম্যাচ জিতলে র্যাংকিংয়ে ৬ নম্বরে উঠবে। কয়টা হারলে কত হবে, জিতলে কত হবে- সব হিসাব নিকাশ দিয়ে রেখেছিল তারা। হিসাব ছিল, বাংলাদেশ যদি আয়ারল্যান্ডকে দুই ম্যাচেই হারায় এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে জিতে তাহলে শ্রীলঙ্কাকে টপকে র্যাংকিংয়ে ৬ নম্বরে উঠে যাবে।
Advertisement
দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে ভালো শুরুর পরও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি শেষ হতে পারেনি। ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। আইরিশদের বিপক্ষে বাকি ম্যাচটিতে বড় ব্যবধানেই জিতেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে গেছে। কিউইরা টানা তিন ম্যাচ জেতার কারণে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।
ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি তাই পরিণত হয়েছে নিয়মরক্ষার লড়াইয়ে। তবুও, এটা দু’দলের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ। কারণ, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দু’দলই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পড়েছে একই গ্রুপে। এ কারণে শেষ ম্যাচে যদি টাইগারদের কাছে কিউইরা হেরে যায়, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে নৈতিকভাবেই দুর্বল হয়ে যাবে। তারওপর, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই মাথা নিচু থাকবে তাদের।
এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও ডাবলিনের ক্লনটার্ফে আজ ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে কিউইদের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের সামনে র্যাংকিংয়ের হিসাব-নিকাশ ছিল এমন, টম ল্যাথামের দলকে হারাতে পারলেই ৯৩ রেটিং পয়েন্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশের। একই পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কা রয়েছে ৬ নম্বরে। বাংলাদেশ জিতলে ৯৩ পয়েন্ট হলেও ভগ্নাংশের হিসেবে এগিয়ে থাকার কারণে বাংলাদেশই চলে যাবে ৬ নম্বরে।
Advertisement
এমন একটি হিসাব-নিকাশ খোদ আইসিসিই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সবার সামনে। এমনই এক পরিস্থিতিতে আজ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আর নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম টস করতে নামলেন, তখন দুই আম্পায়ারের নাম জানা গেলো, ইংল্যান্ডের রোরি ব্ল্যাক এবং শ্রীলঙ্কার রুচিরা পালিয়াগুরুগে।
ম্যাচ অফিসিয়াল নির্ধারণ করার দায়িত্ব আয়োজক কিংবা আইসিসির। কাকে আম্পায়ার কিংবা ম্যাচ রেফারি নিয়োগ করবে সেটাও তাদের বিষয়। কিন্তু যখন একটি ম্যাচে অন্য কোনো দেশের স্বার্থ জড়িয়ে যায়, তখন সেই দেশের কাউকে সংশ্লিষ্ট ম্যাচের অফিসিয়াল কিভাবে নির্ধারণ করা হয়! নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেই র্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে টপকে যাবে, এ বিষয়টা নিশ্চিয় জানা রয়েছেন লঙ্কান আম্পায়ার পালিয়াগুরুগের।
সুতরাং, ম্যাচে তার প্রভাব কিছুটা হলেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। নিশ্চিত এলবি কিংবা সন্দেহজনক কোনো আউটে মাশরাফিদের আবেদনে সাড়াই দিচ্ছেন না লঙ্কান এই আম্পায়ার। বাংলাদেশকে লড়াই করতে হচ্ছে যেন শ্রীলঙ্কার ১১ ক্রিকেটারের সঙ্গে আম্পায়ারের বিরুদ্ধেও।
ইনিংসের ২২তম ওভারের দুটি ঘটনাতেই স্পষ্ট পালিয়াগুরুগে কতটা পক্ষপাতমূলক মনোভাব দেখাচ্ছেন আজ। ওভারের প্রথম বলেই টম ল্যাথামকে বল করলেন মাশরাফি। ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না ল্যাথাম। বল গিয়ে আঘাত করলো সোজা ডান পায়ে। পুরোপুরি পরাস্ত ব্যাটসম্যান। কয়েকবার টিভি রিপ্লেতে দেখা গেলো, বল ছিলো মিডল স্ট্যাম্পের ওপর। নিশ্চিত লেগ বিফোর। মাশরাফিরা সমস্বরে চিৎকার করে আউটের আবেদন জানালেন; কিন্তু পালিয়াগুরুগে তাতে সাড়াই দিলেন না।
Advertisement
একই ওভারের পঞ্চম বলে মাশরাফি আবারও বল করলেন ল্যাথামকে। অফ স্ট্যাম্পের পাশ ঘেঁষে বল চলে যাচ্ছিল বাইরে। খোঁচা দিতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে পারেননি ল্যাথাম। বোলার এবং উইকেটরক্ষকের সন্দেহ হলো বলটি ব্যাট ছুঁয়ে গিয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়েছে। জোরালো আবেদন। টিভি রিপ্লেতেও মনে হয়েছিল, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গেছে বল। আম্পায়ার এ ক্ষেত্রে টিভি আম্পায়ারের সহযোগিতা নিতে পারতেন; কিন্তু তা না করে পালিয়াগুরুগে সরাসরি সে আবেদন নাকচ করে দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশের এই ম্যাচে কেন লঙ্কান আম্পায়ারকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলো? তিনি তো এখন চাইবেনই যে, কোনোভাবেই যেন র্যাংকিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলতে না পারে বাংলাদেশ। তাহলে তাকে কেন তিনি এই ম্যাচের আম্পায়ার? এমন পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত তো তিনি দিতেই থাকবেন।
আইএইচএস/জেআইএম