আর কয়েকদিন পরেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান।রোজার মাস আমলের মাস। সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির মাস। কিন্তু কথায় আছে ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি!’ সে কারণে এক শ্রেণির মানুষের কাছে এই রোজার মাসই হচ্ছে তাদের আখের গোছানোর মাস। বিশেষ করে ভেজালকারীদের জন্য পবিত্র এই মাসটি হচ্ছে মোক্ষম সময়। এজন্য ভেজালবিরোধী অভিযানকে জোরদার করতে হবে।আশার কথা হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা আসন্ন রমজান মাসে যাতে খাদ্যে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য ও পানীয় প্রস্তুত এবং বিক্রি করতে না পারে সে জন্য প্রতিদিন মোবাইল কোর্টের অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী বলেন, রমজানে প্রতিদিন চারটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। বিএসটিআইয়ের চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রমজান উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর বাইরে ও ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী পুরো রমজান মাসজুড়ে মোবাইল কোর্ট চলবে। এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।
Advertisement
অবশ্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের বৈধতার বিষয়টি এখন আদালতের হাতে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। এ অবস্থায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকুক এটিই চায় দেশের মানুষজন। বিশেষ করে রমজানে ইফতার সামগ্রীতে যেন কোনো ধরনের ভেজাল মেশাতে না পারে ভেজালকারীরা সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। অথচ খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। খাদ্য ও ভোগ্য পণ্যের মান ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সাতটি মন্ত্রণালয় কাজ করে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখানে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজমান। কার কোন দায়িত্ব কে কিভাবে পালন করবে সেটা নিরূপণ করতেই বেলা বয়ে যায়। আমাদের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর আছে। দেশে ভোক্তা অধিকার আইনও আছে। কিন্তু কোথাও এই আইনের তেমন প্রয়োগ হতে দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে তাদের তৎপরতা চোখে পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে দুরারোগ্য রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজালমিশ্রিত খাবার খাওয়া। বিশেষ করে সারা দিন রোজা রাখার পর ভেজালমিশ্রিত খাবার খেলে তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খাদ্যে ভেজাল করা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই ভয়ানক অপরাধীদের তেমন কোনো শাস্তিই হয় না। ভেজালের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে যে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব এ ব্যাপারে সবাই একমত। কাজেই প্রয়োজনে নতুন আইন করে হলেও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
Advertisement
এইচআর/আরআইপি