বেলা সাড়ে ১১টা সবে। তাতেই যেন মগজ গলে যাওয়া অবস্থা। রিকশার হুড নামিয়ে সিটে পা রেখে খানিক আয়েশি ভঙিতে শুয়ে আছেন চালক ময়নাল। হাতিরঝিল পুলিশ প্লাজার উত্তর পাশের রাস্তা ঘেঁষে ছোট একটি গাছ। গাছের ছায়া কিছুটা এসে পড়েছে সড়কেও। আর তাতেই প্রশান্তির আধার খুঁজছেন ময়নাল।
Advertisement
এই চালক রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যতটা না ক্লান্ত, তার চেয়ে অধিক ক্লান্ত অসহ্য গরমে। ঘামে লুঙ্গি ভিজে একাকার। শার্টের বোতাম খুলে প্রায় উদোম। মাথায় বাঁধা গামছাটিও ভেজা। ভেজা গামছা থেকে ঘামের উৎকট গন্ধ মিলছে দূর থেকেই।
ঢাকার গরম। তীব্র দাবদাহে জীবন যেন ওষ্ঠাগত। আর অসহনীয় গরমের খড়গে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন তৃণমূলের শ্রমজীবী মানুষেরা। জীবনের মানে খুঁজতে আসা রিকশা-ভ্যান-ঠেলাগাড়িচালক বা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকাই যেন এখন দুর্বিষহ।
ইট-পাথরে ঘেরা আর যান্ত্রিক নগরীতে গরমের তেজ একটু বেশিই বটে। পিচঢালা সড়ক থেকে অনবরত উৎরে ওঠে দাবদাহ। গরম থেকে বাঁচতে নগরবাসীর শত চেষ্টাও চলে। বৈদ্যুতিক ফ্যান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণসহ নানা আয়োজনে যন্ত্রণা লাঘবের প্রয়াস।
Advertisement
কিন্তু ওদের কপালে কিছুই জোটে না। যে গ্যারাজে ঘুমান সেখানে হাতপাখাও মেলে না। রিকশার প্যাডেলে পা রেখেই বেঁচে থাকার ভরসা ওদের। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অন্যের সেবায় ঘাম ঝরান। তবে গরমে যেন নাজেহাল অবস্থা এখন। দু’দণ্ড শ্রম দিয়েই হাঁপিয়ে উঠছেন রাজধানীর তৃণমূলের শ্রমিকরা। গরম আর শ্রমে ক্লান্ত শরীর, শ্রান্ত মন নিয়ে ওদের বিশ্রামের এতটুকু জায়গাও মেলে না।
রামপুরা ব্রিজের ওপর ভরদুপুরে মাথার ওপরে খাড়া সূর্য তখন। ময়লার একটি ভ্যান টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনজন। গরম সইতে না পেরে একজন গায়ের জামা খুলেই ফেলেছেন।
রবিউল নামের ওই ভ্যানচালক বলেন, ‘শরীরে এখন সব-ই সয়। রোদ-বৃষ্টির চিন্তা করে বইয়া থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। তয় আইজকে একটু বেশিই গরম। চান্দি ফাইটা যাইছে (যাচ্ছে)।’
বশির নামের আরেক রিকশাচালক গামছা দিয়ে মাথা ঢেকে যাত্রীর অপেক্ষায় একই ব্রিজে দাঁড়িয়ে। বলেন, ‘তিনদিনের গরমে দম আর চলছে না। গতকাল গরমের চটে রিকশা বের করি নাই। আজ বাইর করে তিন টিপ মারছি। আর পারছি না। কোথায় খাড়ামু (দাঁড়িয়ে), তারও উপায় নাই। গরীবের কি আর জায়গা আছে!’
Advertisement
এএসএস/এমএআর/এআরএস/জেআইএম