তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। বৃষ্টি না হওয়ায় কোনভাবেই কমছে না গরমের মাত্রা। অতিরিক্ত গরমে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিসহ নানান রোগব্যাধি। আক্রান্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। এ ধরনের রোগীদের ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর (শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), মাথাব্যথা, মাংসপেশি, চোখের পেছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, চামড়ায় লালচে ছোপ (র্যা শ) লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা মাত্র ২০৫ জন।
এসব রোগীর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫২ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩৪ জন এবং ২১ মে পর্যন্ত ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে অর্থাৎ গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৩ জন, তিনজন, ১৭ জন ও ৭৪ জন।
Advertisement
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র পাঁচজন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বেসরকারি) একজন এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালে একজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই গুলশান, বনানী, বারিধারা, মহাখালি, ধানমন্ডি, মিন্টু রোড ও বেইলি রোডসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৪ জন অ্যাপোলো এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রোগী সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, এসি ও ফ্রিজের তলায় পানি জমতে না দেয়া, বাড়ির আঙ্গিনা ও নির্মাণাধীন ভবনে পানির চৌবাচ্চা নিয়মিত পরিষ্কারের কথা বলা হলেও এবং এসব বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালালেও অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা বেগম জানান, সময়-অসময়ে বেশি গরম ও অতিবৃষ্টিসহ আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষের জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি বেশি হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হলে তবেই তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হিসাবে তুলছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম। গত বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সে হিসেবে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। কিন্তু জনমনে এ নিয়ে অধিক আতঙ্ক বিরাজ করছে বলেও তিনি জানান।
২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মে ২০১৭ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৯৭০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ২৫৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০০ সালে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন, ২০০১ সালে দুই হাজার ৪৩০ জন, ২০০২ সালে ছয় হাজার ১৩২ জন, ২০০৩ সালে ৪৮৬ জন, ২০০৪ সালে তিন হাজার ৯৩৪ জন, ২০০৫ সালে এক হাজার ৪৮ জন, ২০০৬ সালে দুই হাজার ২০০ জন, ২০০৭ সালে ৪৬৬ জন, ২০০৮ সালে এক হাজার ১৫৩ জন, ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০১০ সালে ৪০৯ জন, ২০১১ সালে এক হাজার ৩৩২ জন, ২০১২ সালে ৬৭১ জন, ২০১৩ সালে এক হাজার ৭৪৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন, ২০১৫ সালে ২৫৭ জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজার ৬৬ জন এবং ২০১৭ সালের ২১ মে পর্যন্ত ২০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
আক্রান্তদের মধ্যে ২০০০ সালে ৯৩ জন, ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ১০ জন, ২০০৪ সালে ১৩ জন, ২০০৫ সালে চারজন, ২০০৬ সালে ১১ জন, ২০১১ সালে ছয়জন, ২০১২ সালে একজন, ২০১৩ সালে দু’জন এবং ২০১৫ সালে দু’জন মারা যান।
এমইউ/এমএআর/এআরএস/এআরএস/জেআইএম