উম্মাতে মুসলিমার দ্বারপ্রান্তে আবারো সমবেত হচ্ছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস রমজান। এ রমজানের প্রধান ইবাদত হলো মাসব্যাপী দিনের বেলায় রোজা পালন করা এবং রাতের বেলায় তারাবিহ নামাজ আদায় করা।
Advertisement
আল্লাহ তাআলঅ এ মাসকে মহিমান্বিত করতেই রমজানে নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। রমজান মাস আসলেই বিশ্বজুড়ে সিনায় কুরআন সংরক্ষণকারী হাফেজগণ তারাবিহ নামাজে পরিপূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করেন।
রমজান মাসব্যাপী রোজাদারগণ পরম আবেগ অনুভূতির সঙ্গে তারাবিহ নামাজ আদায় করে থাকেন। রমজানে তারাবিহ নামাজ আদায় অনেক ফজিলতপূর্ণ।
তারাবিহ শব্দটি আরবি। অর্থ হলো আরাম করা; বিশ্রাম করা। রমজান মাসে ইশার ৪ রাকাআত ফরজ ও ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজের পর বেতের নামাজের আগে যে নামাজ পড়া হয়; তাই তারাবিহ নামাজ।
Advertisement
ইসলামি শরিয়তে তারাবিহর নামাজ সুন্নাতে ‘মুয়াক্কাদা’ অর্থাৎ তাগিতপূর্ণ সুন্নাত নামাজ হলো তারাবিহ। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে।
রমজানের এ বিশেষ নামাজকে তারাবিহ নামাজ বলা হয় এ কারণে যে-মানুষ প্রতি ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করার পর আরাম গ্রহণ বা বিশ্রামের জন্য কিছু সময় বসতেন এবং তাসবিহ তাহলিল আদায় করতেন। কারণ, এ নামাজের ক্বেরাত দীর্ঘ করা হতো।
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ক্বেরাত পড়া হতো বিধায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নামাজ আদায় করা হতো বিধায় এ নামাজকে তারাবিহ নামাজ বলা হয়।
তারাবিহ নামাজ ২ রাকাআত অথবা ৪ রাকাআত করে ইমামের সঙ্গে জামাআতে অথবা জামাআত ছাড়াও আদায় করা যায়। আর ২ রাকাআত করে নামাজ পড়া এবং ৪ রাকাআতের পর খানিকটা সময় বসে তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করার কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
Advertisement
ইশার নামাজের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্তই এ নামাজ আদায় করা যায়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই সুন্নাতে মায়াক্কাদা।
তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করে বলেছেন-‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে সঠিক ঈমান নিয়ে সাওয়াবের নিয়তে রাতের নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অতিতের গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারাবিহ ছিল অতি দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সিজদা সবই ছিল অনেক লম্বা ও ধীরস্থির। হাদিসে এসেছে-
হজরত সাঈদ ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইমাম সাহেব তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।’ (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)
পরিশেষে…বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী যেহেতু রমজান মাসব্যাপী রাতের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। আবার সুন্নাত হলো তারাবিহ নামাজের ক্বেরাত দীর্ঘ করা। তাই দীর্ঘ ক্বেরাতে ধীরস্থিরভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত তারাবিহ নামাজ আদায়ের পর আরাম গ্রহণ এবং তাসবিহ তাহলিল করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধীর স্থিরভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম