খেলাধুলা

নাসির ফিরলে দলের ভারসাম্য ঠিক হয়ে যাবে : সালাউদ্দীন

জাতীয় দলের মুশফিকুর রহীম আর সাকিব আল হাসান তার ছাত্র। বিকেএসপিতে তার অধীনে খেলে খেলেই হাত পাকিয়েছেন এ দুই দেশসেরা ক্রিকেটার। তার সরাসরি ছাত্র না হলেও অফ ফর্ম ও দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও পরামর্শ নিতে যান তামিম ইকবালও।

Advertisement

অতীতে বহুবার ভাল খেলার পর মিডিয়ার সামনে কোচ সালাউদ্দীনের উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন সাকিব, তামিম ও মুশফিক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের তিন স্তম্ভ যাকে ‘গুরু’ মানেন- সেই সালাউদ্দীনের সু’ প্রশিক্ষণেই এবার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।

দলটির এবারের অধিনায়ক নাসির হোসেন আর অন্যতম চালিকাশক্তি মমিনুল হকও যে তার ছাত্র! বিকেএসপিতে যে সালাউদ্দীন স্যারের তত্ত¡াবধানে বেড়ে ওঠা, সেই মানুষটিই এবার গাজীর কোচ। তাই তো নাসির ও মমিনুল যেন একটু বেশি সিরিয়াস।

জাতীয় দলে বিভিন্ন সময় সহকারী ও ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালনের সময় আরও কাছে পাওয়া এনামুল হক বিজয়, জহুরুল ইসলাম অমি ও শফিউল ইসলামের সাথেও সখ্য অন্যরকম। সব মিলে কোচ সালাউদ্দীনের হাতে এবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স যেন একটি পরিবার।

Advertisement

শেষ দিকে হঠাৎ ছন্দপতন না হলে হয়ত প্রথম লিগেই অনেকদুর এগিয়ে যেত সালাউদ্দীনের শিষ্যরা। টানা নয় ম্যাচ জেতার পর একদম শেষ দিকে এসে প্রথমে কলাবাগান আর পরে প্রাইম ব্যাংকের কাছে হেরে যাওয়া। রাউন্ড রবিন লিগ শেষে তারপরও সবার ওপরে গাজী গ্রুপ। 

কেমন ছিল এবার লিগ যাত্রা? এত ভাল খেলে সর্বাধিক ও টানা নয় ম্যাচ জেতার নেপথ্য কাহিনী কী? আবার শেষ দিকে পর পর দুই ম্যাচ হারার কারণই বা কি? জাগো নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সে সব কথাই জানিয়েছেন কোচ সালাউদ্দীন। আসুন শোনা যাক সে কথোপকাথন-

জাগো নিউজ : টানা নয় ম্যাচ জেতার পর শেষ দিকে এসে দুই ম্যাচ পরপর হেরে গেলেন, হঠাৎ কি হলো?

সালাউদ্দীন : শেষ দুই ম্যাচ হারার কারণ ভিন্ন। আগে কলাবাগানের কাছে হারের কথা বলি, কলাবাগানের সাথে আমরা হেরেছি বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে। আসলে ওই ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা উইকেটের চরিত্র দেখে-বুঝে ব্যাট করেনি। অ্যাপ্রোচটা উইকেট ও খেলার অবস্থা অনুযায়ি ঠিক হয়নি। বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান একটু তড়িগড়ি করে ব্যাট চালিয়েছে। আবার কেউ কেউ একটু বেশি উচ্চাভিলাষি শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে। বলতে পারেন ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট হয়েছে।’

Advertisement

আর সর্বশেষ প্রাইম ব্যাংকের সাথে ম্যাচে ইনজুরি আমাদের দারুণ ভুগিয়েছে। টসের কয়েক মিনিট আগে আলাউদ্দীন বাবু হঠাৎ এসে বলে ভাই আমি ইনজুরড। আমার হাঁটুতে একটু লেগেছে। ব্যাথা করছে। আমার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। আর খেললেও বল করতো পারবো না। জানেন ততক্ষণে প্লেয়ার লিস্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মানে ১১জন চূড়ান্ত করে ফেলেছিলাম আমরা।

একবার ভাবুনতো অবস্থাটা কেমন ছিল? কি আর করা। আলাউদ্দীন বাবুকে তখন আর বাদ দেয়ার সুযোগ ছিল না। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হলো তাকে। এতে করে আমাদের বোলিং শক্তি গেল কমে। মূল পেসারই বল করতে পারবে না। বাধ্য হয়ে পারভেজ রসুলকে আগেভাগে নিয়ে আসতে হয়েছে।

ভাগ্য বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। ব্যাটিং করতে গিয়ে ক্র্যাম্প হলো জহুরুল ইসলাম অমির। অথচ তখন অমি (জহুরুল) আর মুমিনুলের জুটি জমে উঠেছে। অগত্যা কি আর করা! অমি স্বেচ্ছায় ফিরে আসলো সাজঘরে। অমি পুরো ইনিংস শেষ করতে পারলে আমাদের স্কোরবোর্ডের চেহারা অন্যরকম হতে পারতো।

জাগো নিউজ : এখনো সবার ওপরে থেকে সুপার লিগ যাত্রা শুরু করবে আপনার দল। আপনি কতটা আশাবাদী?

সালাউদ্দীন : সত্যি কথা বলতে কী, শেষ দুই ম্যাচ হারায় হয়তো নিকট প্রতিদ্ব›দ্বীদের সঙ্গে পয়েন্ট পার্থক্য কমে গেছে। তবে আমি একটুও মনোবল হারাইনি। এখনো যথেষ্ঠ আশাবাদী।

জাগো নিউজ : আশাবাদী হবার কারণ কী শুধুই দুই পয়েন্ট এগিয়ে থাকা?

সালাউদ্দীন : নাহ তা বলবো না। আসলে সুপার লিগে আমি নাসিরকে দলে ফিরে পাবো। নাসির একাই অনেক। আমার অধিনায়ক। ব্যাটিং স্তম্ভ। বল হাতেও নির্ভরতার প্রতীক। সবচেয়ে বড় কথা আমার দলের ব্যালেন্সটা আবার ফিরে আসবে।

জাগো নিউজ : তাহলে কি নাসির ও শফিউল চলে যাওয়ায় শক্তির ভারসাম্য কমে গিয়েছিল?

সালাউদ্দীন : হ্যাঁ, তা কমে গিয়েছিল অবশ্যই। নাসির টিমের ক্যাপ্টেন। ব্যাট হাতে নির্ভরতার প্রতীক। তার বোলিংটাও কার্যকর। এমন একজন পারফরমারের অভাব সব সময়ই অনুভব হয়। আমি নাসিরকে খুব মিস করেছি। শফিউল চলে যাওয়ায় পেস আক্রমণের শক্তিও কমে গিয়েছে। শফিউল যে কয় ম্যাচ খেলেছে, ভাল বল করেছে। কাজেই নাসির ও শফিউলের অভাববোধ হয়েছে। 

জাগো নিউজ : শেষ দুই ম্যাচ হারার পরও প্রথম লিগে আপনার দল সবার ওপরে। দল হিসেবেও সেরা ক্রিকেট খেলেছে। এই ভাল খেলার পেছনের রহস্য কি? এটা কি কোচ সালাউদ্দীনের ক্যারিশমা?

সালাউদ্দীন : না না। সব কৃতিত্ব ক্রিকেটারদের। তারা সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে চেষ্টা করেছে। তাই মাঠে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স এত ভাল খেলেছে।

জাগো নিউজ : এর বাইরে গাজী গ্রুপের ভাল খেলার আরও কোন বিশেষ কারণ?

সালাউদ্দিন : একটা কথা বলতে পারি, আমাদের শিবিরের ভেতর ও বাইরের অবস্থাটা খুব ভাল। পুরো দল যেন একটা পরিবার। পরিবেশ-পরিস্থিতি ভাল বলে ক্রিকেটাররাও সামর্থ্যরে সবটুকু উজাড় করে খেলেছে। আমার মনে হয় সবার মধ্যেই টিম ফিলিংসটা কাজ করেছে। সবাই দলের প্রতি অন্যরকম দরদ অনুভব করে খেললে আপনাআপনি পারফরমেন্স ভাল হয়। আমাদেরও হয়েছে।

এর বাইরে আরও একটি কারণ আছে। তাহলো, আমাদের দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের মধ্যেই ভাল খেলার একটা দৃঢ় সংকল্প লক্ষ্য করেছি। সবাই নিজের সেরাটা উপহার দিতে চেষ্টা করেছে। মানে ব্যক্তিগতভাবে ভাল খেলার তাগিদ অনুভব করেছে। এতে করে দল সার্ভিস পেয়েছে বেশি।

জাগো নিউজ : আগের বছর আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। এবার আম্পায়ারিং কেমন হচ্ছে? আপনার দল কি দূর্বল, ত্রুটিপূর্ণ কিংবা পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছে কোনো ম্যাচে?

সালাউদ্দীন : নাহ, সামগ্রিকভাবে এবার আম্পায়ারিং ভাল হয়েছে। হাতে গোনা বিচ্ছিন্ন কিছু সিদ্ধান্তের ঘটনা বাদ দিলে এবার খেলা পরিচালনার মান সস্তোষজনক।

জাগো নিউজ : সুপার লিগের অন্য পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে কিছু বলুন?

সালাউদ্দীন : কে কিভাবে দেখবেন, জানি না। তবে আমার মনে হয় শক্তি ও সামর্থ্যরে দিক থেকে সেরা ছয় দলই সুপার লিগে উঠেছে। খালি চোখে মোহামেডানকে তুলনামূলক কমজোরি মনে হয়; কিন্তু আসলে তা নয়। মোহামেডান শক্তিশালী দল। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বেশ কজন পরীক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমার রয়েছে এই দলে। মোদ্দা কথা, আমার চোখে রূপগঞ্জের চেয়ে মোহামেডান শক্তিতে এগিয়ে।

এছড়া সুপার লিগের অপর চার দল আবাহনী, প্রাইম দোলেশ্বর, প্রাইম ব্যাংক ও শেখ জামাল প্রায় সমান ও কাছাকাছি শক্তির। কাউকে হালকাভাবে নেয়ার কিছু নেই। কাউকে হেলাফেলার সুযোগও নেই। আমার মনে হয় এই দলগুলোর শক্তি ও সামর্থ্য খুব কছাকাছি। এরা যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। তারপরও আমার মনে হয় সুপার লিগের প্রথম দুুটি ম্যাচ খুব ভাইটাল। প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পথে থাকতে পারলে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস