প্রথম পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, এই পর্বে রান তোলা আর উইকেট শিকারে শীর্ষ তিনে নেই গাজী গ্রুপের কোনো ক্রিকেটার। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে চার নম্বর জায়গাটি দখল করে আছেন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল গাজী গ্রুপের দুই পারফরমার এনামুল হক বিজয় ও আবু হায়দার রনি।
Advertisement
সবার জানা, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আর কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান আইপিএল খেলতে যাওয়ার কারণে এবারের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের প্রথম পর্বের একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি। আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি আর ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেয়ার জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ আগে দেশ ছাড়া মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শুভাশিস রায়, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সানজামুল ইসলামরাও গড়পড়তা চার ম্যাচের বেশি অংশ নিতে পারেননি।
খুব স্বাভাবিকভাবে জাতীয় ক্রিকেটারদের কেউই প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের প্রথম পর্বে রান তোলা আর উইকেট শিকারে ওপরের দিকে নেই। প্রথম লিগের টপ স্কোরার লিটন দাস। আবাহনীর এ ওপেনার পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরিতে ১০ খেলায় অংশ নিয়ে সর্বাধিক ৫৭৮ রান তোলায় সবার শীর্ষে।
বর্তমান জাতীয় দলের বাইরে থাকা লিটন দাসের ঠিক পেছনে জায়গা হয়েছে জাতীয় দলের আরেক সাবেক অলরাউন্ডার নাঈম ইসলামের। লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের নাঈম প্রথম লিগে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী। ১০ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৫২৭।
Advertisement
রান তোলায় তিন নম্বরে যিনি, তার নামের আগেও সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারের তকমা এঁটে গেছে। তিনি জুনায়েদ সিদ্দিকী। ব্রাদার্স ইউনিয়নের এ বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৯০ রান। রান সংগ্রহে চতুর্থ স্থানটিও আরেক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের। তার সংগ্রহ ৪৬৪। তবে অনেক প্রতিষ্ঠিত পারফরমারকে পেছনে ফেলে দুটি সেঞ্চুরিসহ ৪৫৭ রান করে পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন খেলাঘর সমাজ কল্যাণ্যের তরুণ সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান রবিউল ইসলাম রবি।
ওদিকে উইকেট শিকারে সবার ওপরেও জাতীয় দলের বাইরে থাকা আরাফাত সানি। প্রাইম দোলেশ্বরের এ বাঁহাতি স্পিনারের ঝুলিতে জমা পড়েছে সর্বাধিক ২৮ উইকেট (১১ খেলায়)। উইকেট শিকারে দ্বিতীয় স্থানটিও আরেক বাঁহাতি স্পিনারের। তিনি তাইজুল ইসলাম। মোহামেডানের হয়ে খেলা এ বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট সংখ্যা ২৫টি। তৃতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারিও একজন স্পিনার। তবে বাঁহাতি অর্থোডক্স নয়। অফস্পিনার। নাম নিহাদউজ্জামান। এ তরুণ দখল করেছেন ২৩ উইকেট।
২২ উইকেট পেয়ে উইকেট শিকারে চার নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন গাজী গ্রুপের বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনি। পাঁচ নম্বর জায়গাটি তিন বোলার আব্দুর রাজ্জাক (শেখ জামাল), মোহাম্মদ শরীফ ও মোশাররফ রুবেল (দুজনই লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের) ভাগ করে নিয়েছেন।
শেখ জামাল অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে না পড়লে হয়তো প্রথম পর্বে সর্বাধিক উইকেট শিকারি হতে পারতেন এ অভিজ্ঞ স্পিনার। মাত্র ৭ খেলায় তার সংগ্রহ ২১ উইকেট। প্রতি ম্যাচে গড়ে তিন উইকেট শিকারি রাজ্জাক একই অনুপাতে উইকেট পেলে ১১ ম্যাচে তার শিকার দাঁড়াত ৩৩ টি।
Advertisement
প্রথম লিগে দুই সেঞ্চুরি করলেও রান তোলায় সেরা পাঁচে জায়গা পাননি আবাহনীর বাঁহাতি নাজমুল হোসেন শান্ত (৪২৪)। এছাড়া সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী লিটন দাস, দ্বিতীয় স্থান পাওয়া নাঈম ইসলাম, তৃতীয় জুনায়েদ সিদ্দিকী এবং পঞ্চম স্থান পাওয়া রবিউল ইসলাম রবি- প্রত্যেকে দুুটি করে শতরান করেছেন।
চার নম্বরে জায়গা পাওয়া এনামুল হক বিজয় সেঞ্চুরি করতে না পারলেও সর্বাধিক পাঁচ অর্ধশতকের মালিক। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে ১৯০ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস উপহার দিলেও বাকি খেলাগুলোতে সে তুলনায় রান করতে না পারা মোহামেডান অধিনায়ক রকিবুল হাসান রান (৪৪৪) তোলায় হয়েছেন ছয় নম্বর।
লিটন দাস শুধু রান তোলায় ওপরে নয়, গড়ও বেশ ভাল (৫৭.৮০)। তার স্ট্রাইক রেট প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক ১০৮.০৩। তিন হাফ সেঞ্চুরি ও জোড়া শতক উপহার দেয়া লিটন দাসের সর্বোচ্চ ১৩৬। সমান দুটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরির মালিক নাঈম ইসলামের গড় ৬৫.৮৭। আর স্ট্রাইক রেট ৮৩.৫১।
অন্যদিকে সর্বাধিক উইকেট শিকারি আরাফাত সানি দুইবার পাঁচবার বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন। এ বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার ৫৬ রানে ৬ উইকেট। অন্যদিকে একবার পাঁচ বা ততোধিক আর একবার ৪ উইকেট দখল করা তাইজুল ইসলামের সেরা বোলিং ৬/২৪।
জাতীয় দলের হয়ে খেলতে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে ব্যাট হাতে সফল মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেন। লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের অধিনায়ক মুশফিকের সংগ্রহ ৪ খেলায় ২৭৯। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি। আবাহনী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কোনো সেঞ্চুরি করতে না পারলেও তিন ফিফটিতে ২৪৭ করে গেছেন। আর গাজী গ্রুপের ক্যাপ্টেন নাসির হোসেনের সংগ্রহ ২২৬। তার আছে একটি করে শতক ও অর্ধশতক।
এআরবি/এনইউ/জেআইএম