১২৯ রানের পুঁজি নিয়ে আইপিএলের শিরোপা জিততে পারে কেউ, কল্পনাও করা অসম্ভব। যেখানে পুনের মত দল প্রতিপক্ষ; কিন্তু কী অসাধারণ ম্যাচই না উপহার দিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলাররা। ১২৯ রানকেও তারা বানিয়ে ফেলেছে বিশাল হিমালয়ের সমান দৃঢ়। শেষ পর্যন্ত সেই দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারলো তারা। ১ রানে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসকে হারিয়ে তৃতীয়বারেরমত আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন হলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
Advertisement
রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শিরোপা জয়ের জন্য ১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পুনের ব্যাটসম্যানরা যে খুব খারাপ করেছে তা বলা যাবে না। ওপেনার আজিঙ্কা রাহানে করেছেন ৪৪ রান। স্টিভেন স্মিথ করেছেন ৫১ রান। তবুও পরাজিত দলে তারা। কারণ, মুম্বাইর বোলাররা দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে জিতিয়ে দিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে।
শেষ ওভারেই যত নাটকীয়তা জমে উঠেছিল। জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ১১ রান। ব্যাটসম্যান মনোজ তিওয়ারি এবং স্টিভেন স্মিথ। প্রথম বলেই মিচেল জনসনকে বাউন্ডারি মেরে দিলেন তিওয়ারি। দ্বিতীয় বলে লং অনে ক্যাচ তুলে দিলেন তিনি। ধরলেন কাইরণ পোলার্ড।
তিওয়ারি আউট হয়ে গেলেও প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইকে চলে আসেন স্মিথ। এবারও মিচেল জনসনের বাজিমাত। তার বলকে এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে তুলে দিতে চাইলেন স্মিথ; কিন্তু বল গিয়ে জমা পড়লো সোজা আম্বাতি রাইডুর হাতে। সঙ্গে সঙ্গেই নীল জার্সি সব এক হয়ে গেলো। উইকেট উদযাপনের সঙ্গে পরের তিন বল নিয়েও মিচেল জনসনকে পরামর্শ দিয়ে দিলো মুম্বাইর ক্রিকেটাররা।
Advertisement
চতুর্থ বলে ওয়াশিংটন সুন্দর নিলেন ১ রান। পঞ্চম বলে উইকেটে আসলেন ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিলেন ড্যানিয়েল। ক্যাচটি তালুতে জমিয়ে রাখতে পারলেন না হার্দিক পান্ডিয়া। হয়ে গেলো দুই রান। শেষ বলে প্রয়োজন চার রান। একটা বাউন্ডারি মারলেই কেল্লাফতে। মুম্বাইর ফিল্ডাররাও সব তখন বাউন্ডারি সীমানায়।
জনসন বল করলেন ক্রিশ্চিয়ানকে। ডিপ স্কয়ার লেগে খেললেন এই অসি ব্যাটসম্যান। ২ রান নিলেন তৃতীয় রান নিতে গিয়ে হলেন রানআউট। সঙ্গে সঙ্গেই পরিসমাপ্তি ঘটলো চরম নাটকীয়তাপূর্ণ ম্যাচটির। ১ রানে জিতে আইপিএলের শিরোপা সর্বোচ্চ তৃতীয়বারেরমত জিতে নিলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। আর প্রথমবার ফাইনালে উঠেও দারুণ সুযোগটা হাতছাড়া করে ফেললো পুনে সুপারজায়ান্ট।
১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৭ রানের মাথায় রাহুল ত্রিপাথিকে হারায় পুনে। এরপর ৫৪ রানের জুটি গড়েন স্মিথ আর রাহানে। ১১.৫ ওভারে যখন রাহানে আউট হন ৩৮ বলে ৪৪ রান করে, তখনও নিশ্চিত ছিল পুনেই জিতছে এই ফাইনাল।
এরপর ধোনি আর স্মিথ গড়েন ২৭ রানের জুটি। যদিও এই জুটিতে বেশ কিছু বল খরচ করে ফেলেন ধোনি আর স্মিথ। এ সময়টায় করণ শর্মা, লাসিথ মালিঙ্গা কিংবা জসপ্রিত বুমরাহরা বোলিং করেন। উইকেট তুলতে না পারলেও রানের চাকা পুরোপুরি মন্থর করে দেন। ১৩ বল খেলে ১০ রান করে আউট হয়ে যান ধোনি।
Advertisement
মনোজ তিওয়ারি শেষ ওভারে চেষ্টা করেছিলেন একটা বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় উপহার দেয়ার; কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত পুনের ইনিংস থেমে যায় ৬ উইকেটে ১২৮ রানে। হাতে উইকেট ধরে রেখেও কোনো লাভ হলো না পুনে সুপারজায়ান্টসের।
ম্যাচ শেষে একদিনে মুম্বাইর খেলোয়াড়দের উল্লাসে যেমন আনন্দঘণ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তেমনি আরেকদিকে স্টিভেন স্মিথের অশ্রুসজল চোখ একটা ভারী পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল। খেলাধুলায় তো এটাই নিয়ম। এ নিয়ম মেনেই প্রতিযোগিতায় নামতে হয়।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পুনের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২৯ রান তুলতে সক্ষম হয় মুম্বাই। সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। ২৪ রান করেন রোহিত শর্মা।
আইএইচএস/