হোটেল পূর্বানীতে দুই রাত্রি থাকা। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। আসা-যাওয়ার জন্য স্মার্ট অ্যামাউন্ট। জামাই আদরই তো! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনের বছর পার না হতেই নতুন ভোটের হাওয়া। মধুময় এ হাওয়াটা প্রথম বইলো জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল সংগঠকদের উপর দিয়ে।
Advertisement
শনিবার রাতে হোটেল পূর্বানীতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার আড়ালে হয়ে গেলো নির্বাচনের আগাম মহড়া। সে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন শুধু জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতিরা। বাফুফের নির্বাচনে জেলার ভোট ৬৪টি এবং বিভাগের ৮টি। ৭২ সংস্থার মধ্যে ৪৮টির সভাপতি অথবা প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।
জেলার ফুটবলের প্রসার ও উন্নয়নের জন্য মতবিনিময় শিরোনামে এ অনুষ্ঠানে অন্যতম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের; কিন্তু তিনি আসেননি। মঞ্চে বসেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যিনি বাফুফেরও সদস্য। উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন।
সভাপতিত্ব করেছেন নড়াইল জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশিকুর রহমান মিকু। বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় শুরু থেকে অনুষ্ঠানে থাকলেও প্রথমে তাকে মঞ্চে ডাকা হয়নি। পরে খুলনার সংগঠক আজমল আহমেদ তপন বক্তব্য দেয়ার সময় বিষয়টি আয়োজকদের নজরে আনলে বাদল রায়কে মঞ্চে নেয়া হয়।
Advertisement
বাফুফের সর্বশেষ নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন তরফদার মো. রুহুল আমিন। তখন জেলায় জেলায় গিয়ে ভোট চাওয়ার সময় তাদের আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে প্রতিশ্রুতি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তার জন্য জেলা ও বিভাগের ফুটবল সংগঠকদের ডেকেছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জেলার ফুটবল কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে আলোচনা হয়েছে। বাদ পড়েনি ভোটের আলোচনাও। খুলনা বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দিতে উঠে আজমল আহমেদ তপন ক্ষোভ প্রকাশ করলেন গত নির্বাচনে তাদের ৩ জন প্রার্থী হেরে যাওয়ায় ‘আমাদের ৭২ ভোট ছিল। অথচ শামসুল হক চৌধুরী, আলমগীর হোসেন আলো ও তৌফিকুর রহমান তোফা হেরে গেলেন।’
বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেছেন, ‘ফুটবলের খারাপ সময় যাচ্ছে। সবাই প্রশ্ন করেন ফুটবলকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দিয়েছিলাম, বাফুফেতে গত এক বছরে সে ইশতেহার গুরুত্ব পায়নি। কেন পায়নি? ফুটবল তো কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়।’
বাদল রায় যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন চট্টগ্রামের সংগঠক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর দর্শক সারি থেকে বলছিলেন ‘উনি কেন? উনিতো জবাদিহীতা করবেন। উনিওতো বছরের পর বছর বাফুফেতে আছেন। কই পদত্যাগতো করছেন না, কিংবা কোনে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উনিতো আপত্তিও করেননি। দোষ অন্যের উপর চাপানো যাবে না।’
Advertisement
গত নির্বাচনে যে টাকার খেলা হয়েছে তা বেরিয়ে এসেছে জামালপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদওয়ানের বক্তব্যে ‘কোথায় গেলো ভোটের সময়ের সেই ব্যাগ আর বস্তাভরা টাকা। নির্বাচনের সময় ওই টাকা ব্যয় না করে জেলার ফুটবলে দিলেই তো হতো।’ নির্বাচনে টাকা উড়া মানেই তো ভোটারদের পকেট বা ব্যাগ ভরা। ফুয়াদের এ বক্তব্যের সময় একজন বলছিলেন প্রার্থীদের ব্যয় করা সে টাকা নিয়েছেন কারা? পাশে বসা জেলার এক সংঠক জবাব দিলেন ‘টাকা সবাই নেয়, নাম হয় শুধু জেলার সংগঠকদের।’
অনুষ্ঠান শেষে আড্ডায় একজন মজা করে বলছিলেন, ‘এবার তো দেখি আগেভাগেই নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করলো। এক বছর আগে যে টাকা উড়লো তার রেশ না কাটতেই আবার ভোটারদের সামনে নতুন টাকার গন্ধ। আগামী নির্বাচনে তো ভোটের আগেই লড়াই হয়ে যাবে কাউন্সিলর হওয়া নিয়ে। কে জানে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতেই বাফুফের সদস্য ক্লাব/সংস্থাগুলোতে ভোটের প্রয়োজন হয় কি না।’
নিজের বক্তব্যে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেছেন, ‘জেলাগুলোকে বাদ দিয়ে ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এখন নির্বাচনের প্রশ্ন না। নির্বাচনতো অনেক দূরে। তাছাড়া নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম জেলাগুলোকে ২ লাখ টাকা করে দেবো। ঈদের পর থেকে পর্যায়ক্রমে সে টাকা দেয়া হবে।’
তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের নির্বাচন করা প্রসঙ্গে হারুনুর রশিদ বলেছেন, ‘কাজই তাকে তার উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাবে। উনি ফুটবলের সেবা করলে আমরা ওনার সঙ্গে আছি। যখন করবেন না তখন আসসালামু আলাইকুম বলে দেবো। ফুটবলের জন্য যার হাত খোলা থাকবে তার সঙ্গেই আমরা থাকবো। ’
আশিকুর রহমান মিকু বাফুফেকে আলমিটাম দিয়ে বলেছেন, ‘আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের নিয়ে মতবিনিময় করতে হবে। আমরা এ অনুরোধ বাফুফেকে চিঠি দিয়ে জানাবো। কোনো বিরোধ নয়, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।’
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম