বাইসাইকেল চালাতে সমবয়সীরা উৎসাহ দিলেও বাবার বয়সী লোকেরা আমাকে টিজ করে। এটা মেনে নিতে পারি না।বেগম রোকেয়া যেখানে রংপুরের এ অঞ্চল থেকে অন্ধকারের দেয়াল ভেঙে নারী সমাজের পর্দা প্রথাসহ সব রকম কুসংস্কারের দেয়াল ভাঙতে চেয়েছেন। সেখানে প্রদীপের নিচেই যেন অন্ধকার রয়ে গেছে।
Advertisement
কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূরানী আক্তার নূর।
পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় নূরানীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল পরিবারে। নূরানীর বড় ভাই রংপুর সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট দুই বোনের মধ্যে একজন পড়েন অষ্টম শ্রেণিতে, অপরজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে।
উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন নূরানী। ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে। ভর্তির পরে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে পরিবার থেকে কিনে দেওয়া হয় বাইসাইকেল। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর বাইসাইকেল চালানো যেন স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না।
Advertisement
শুধুমাত্র বাইসাইকেল চালানোর অপরাধে একটি ছাত্রীবাস থেকে নূরানীকে বের করে দেয়া হয়। এখানেই শেষ নয় আখ্যা দেয়া হয় জঙ্গি হিসেবেও। এ যেন বর্তমান যুগের অবরোধবাসিনী। বর্তমান সমাজেও নারীদের প্রতি যে বৈষম্য দেখা যায়, এ যেন তারই চিত্র। কিন্তু দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস পিছু হঠাতে পারেনি নূরানীকে।
নূরানী বলেন, পরিবারের অর্থ বাঁচাতে চাই, বাবা-মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন। আমাদের একজনের টাকাই হয়তো পরিবার দিতে পারবে না। তাহলে বড় ভাই, ছোট বোন দুটোর পড়াশুনার খরচ কিভাবে চলবে। বাবাকে বলতেই তিনি আমাকে একটি বাইসাইকেলটি কিনে দিয়েছেন। বাইসাইকেল চালাতে তারা আমাকে উৎসাহিত করেন।
রাস্তায় যাওয়ার সময় অনেকেই অনেক কথা বলে খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু বলি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ আমাকে বাইসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত না করলেও আমার বাবার বয়সের লোকরা রাস্তায় আমাকে টিজ করে। বাজে মন্তব্য করেন। এটা মানতে পারি না। তখন মনে হয় সমাজটা এখন উল্টোভাবে চলছে।
নূরানীর প্রবল ইচ্ছা সমাজটাকে বদলানোর। ভবিষ্যতে কী হতে চান জানতে চাইলে নূরানী মৃদু হেসে বলেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সমাজসেবী হতে চাই।
Advertisement
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নূরানী দ্বিতীয়। জন্ম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। বাবা মো. শাহাদত হোসেন ছিলেন মাদরাসা শিক্ষক, মা গৃহিণী। নূরানী ২০১১ সালে জানকিপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৩ সালে দাউদপুর মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এ ব্যাপারে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনজুম তাসনুভা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসনীয়। পরিবারের অর্থ বাঁচিয়ে নূরানী যথেষ্ট শালিনভাবে বাইসাইকেল চালায়। এতে করে অন্য মেয়েরাও তাকে দেখে উৎসাহিত হবে। স্বাবলম্বী হওয়ার সাহসিকতা অর্জন করবে।
সজীব হোসাইন/এফএ/আরআইপি