জাতীয়

বেশি বজ্রপাত সুনামগঞ্জে

হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল বিপর্যয়ে পড়া সুনামগঞ্জের আরেক বিপদের নাম বজ্রপাত। এ জেলাতেই সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে মার্চ থেকে মে—এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে।

দেশের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর সিলেট ও হাওর এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের মধ্যাঞ্চলে বজ্রপাত বাড়ছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোর কিনমারা ডেমকেপ এলাকায়, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এবং জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো লেক এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। সারা বছরের হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে লেক মারাকাইবো এলাকায়। সেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩২টির বেশি বজ্রপাত হয়। আর সুনামগঞ্জে তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেশি। ভারতের খাসি পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় মার্চ থেকে মে মাসজুড়ে মেঘ জমে থাকে। স্তরীভূত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জে বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে।

Advertisement

আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৪ সালে সারা দেশে ৯১৮টি বজ্রপাত আঘাত হেনেছিল, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২১৮টি, ২০১৬ সালে তা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ আরও একটি নতুন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এত দিন দেশের বজ্রপাতগুলো মূলত সিলেট-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওর এলাকায় হতো। সেখানে বেশির ভাগই জলাভূমি ও জনবসতি কম হওয়ায় মানুষের মৃত্যুর হার ছিল অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু গত অর্ধযুগে পর্যায়ক্রমে দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে বজ্রপাত বাড়ছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী এলাকায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এসব জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় প্রাণহানির পরিমাণও বেড়ে গেছে।

এদিকে, গত বছর সরকার বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবার নগদ ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা পাবে। জেলা প্রশাসকদের দফতরে থাকা মানবিক সহায়তা তহবিল থেকে আহত ব্যক্তিরা পাবে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরামের বিশ্লেষণে বজ্রপাতের আঘাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামের দরিদ্র মানুষ। মূলত ফসলের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তারা মারা যান।

Advertisement

এএইচ/পিআর