দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের শাহি ইমাম পদ থেকে অপসারণ করা হলো নুর রহমান বরকতিকে। বুধবার ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান আরিফ আহমেদ বরখাস্তের কথা ঘোষণা করেছেন। সাতদিনের মধ্যে তাকে অফিস ঘর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাস্টি বোর্ড।
Advertisement
বরকতিকে অপসারণের নোটিশ পাঠানোর পাশাপাশি তার সাম্প্রতিক একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য এবং কাজকর্মের জন্য জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে। দেশবিরোধী ও দেশের বিচারব্যবস্থাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বরকতির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে বরকতির বিরুদ্ধে। দেশদ্রোহের পাশাপাশি মসজিদের কর্মীদের পেটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, নানাবিধ কাজকর্মে অতিষ্ট হয়ে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরানো হয়। তবে উত্তর দেননি বরকতি। যে কারণে তাকে ইমাম পদ থেকে সরানো হলো। বরকতির বিরুদ্ধে এখনই কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি। তবে বরকতি কোনো আইনি পদক্ষেপ করলে মসজিদও আইনি পথে হাঁটবে বলে পরিষ্কার করে দিয়েছেন আরিফ আহমেদ। আপাতত নতুন কোনো ইমাম নিয়োগ করা হচ্ছে না। মোয়াজ্জেমই নামাজ পড়াবেন।
১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে পেশ ইমাম হিসেবে টিপু সুলতান মসজিদে কাজ শুরু করেন বরকতি। প্রায় ৩০ বছর ধরে টিপু সুলতান মসজিদের কর্তৃত্ব ছিল তার হাতে। মুসলিম সমাজে ও রাজ্য রাজনীতিতেও তার প্রভাব ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে তার মান্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার নিরিখে নিজের সে অবস্থান হারিয়ে ফেলেন ইমাম। গাড়িতে লালবাতি ইস্যুতে ধর্মীয় বিভেদ উসকে তিনি বলেন, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইলে, মুসলিমরাও পাকিস্তান চাইবে। এহেন মন্তব্যের পরেই ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়েও ঠেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ।
Advertisement
কেন্দ্রীয় আইন অগ্রাহ্য করে গাড়িতে লালবাতি লাগানো ও বরকতির দেশবিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান মসজিদের বাইরে পথসভা করেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ওই সভা থেকে উলেমা-এ-হিন্দ নেতৃত্ব বার্তা দেয়, বরকতির মতো যারা দেশের বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রতি সমব্যথী, তারা যেন পাকিস্তানে চলে যায়। ভারতের একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও দেশের অখণ্ডতার উপর আঘাত নেমে আসতে দেবেন না। এ রাজ্যের মুসলিমরা এ দেশের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি। যে শিক্ষা স্বামী বিবেকানন্দ দিয়েছেন, যে শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন, সেই শিক্ষা এ রাজ্যের হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বার্তা শিখিয়েছে।
ওই সভায় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বক্তব্য পেশ করার সময় তার সমর্থকদের সঙ্গে বরকতি সমর্থকদের হাতাহাতি লাগে। ওই সভা চলাকালীন বরকতি টিপু সুলতান মসজিদে ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেন সিদ্দিকুল্লাহর সমর্থকরা। সেই সময় বরকতিও সিদ্দিকুল্লার উদ্দেশে কয়েকটি প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেন। তখনই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়, লেগে যায় হাতাহাতি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অশান্তি থামায়। বরকতিকে মসজিদের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সরিয়ে দেয়া হয় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। এই ঘটনার পর বরকতি বউবাজার থানায় সিদ্দিকুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
বিএ
Advertisement