দেশজুড়ে

প্রেমিক সচিবের বাড়িতে ১০ দিন ধরে প্রেমিকার অনশন

বিয়ের দাবিতে প্রেমিক শাকিল রানা সচিবের বাড়িতে ১০ দিন ধরে অনশন অব্যাহত রেখেছেন কলেজছাত্রী পারুল আক্তার (২৩)। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে সব লুটে নিয়েও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রেমিকা পারুলকে বাড়ি থেকে বের করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন পারুল ও তার পরিবার।

Advertisement

এ ঘটনায় বাসাইল থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ প্রতারণার শিকার ছাত্রী পারুলের।

জানা যায়, পারুল সখীপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স শেষ পর্বের ছাত্রী। আর অভিযুক্ত শাকিল বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়ার এমডি মাসুদ রানা মান্নানের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

পারুলের অভিযোগ, আড়াই বছর ধরে অভিযুক্ত শাকিল রানা সচিবের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে মেলামেশা করলেও শেষ পর্যন্ত শাকিল তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় গত ৮ মে সকালে তার বাড়িতে অবস্থান নিতে বাধ্য হন বলে জানান পারুল।

Advertisement

অনশনরত তরুণী আরও বলেন, এ বাড়িতে আসার আগেও শাকিলের জন্য নিজেকে শেষ করার চেষ্টা করেছিলাম। শাকিল আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সবকিছু লুটে নিয়েছে, সে আমাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব এবং এ বাড়ি থেকে বের হবো না।

পারুল বলেন, বাসাইল থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে টাঙ্গাইল কোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

স্থানীয়রা জানায়, সময় মতো না খেয়ে মেয়েটি গত ১৪ মে বিকেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর সুস্থ হয়। মেয়েটির সঙ্গে যদি শাকিল প্রেমই না করতেন তাহলে মেয়েটি তাদের বাড়িতে কেন আসবে? এই মুহূর্তে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না করলে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, বিষয়টি মীমাংসার জন্য কয়েকবার দু’পক্ষের অভিভাবকদের ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পারুলের লোকজন উপস্থিত থাকলেও শাকিল বা তার পক্ষের লোকজন উপস্থিত না হওয়ায় এ ঘটনার কোনো সুরাহা করা যাচ্ছে না।

Advertisement

অভিযুক্ত শাকিলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে পারুলকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে মাত্র তিন মাস আগে পারুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। পারুলের সঙ্গে আমার প্রেমের মতো কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য কোনো একটি চক্র মেয়েটিকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বাসাইল উপজেলা শাখার সভাপতি ওহিদুল ইসলাম মোস্তফা বলেন, ১৪ মে বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে শাকিল ও পারুলের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। শুধু অনশন নেয়া পারুলকে পেয়েছিলাম। পারুলকে আইনের সহায়তা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা মানবাধিকার কমিশন নারি অধিকার রক্ষায় তার পাশে থাকবে।

উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি রাশেদা সুলতানা রুবি বলেন, ১০ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এ ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারছে না এটা দুঃখজনক। দ্রুত এ ঘটনার সমাধান করে দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান তিনি।

বাসাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ নিয়ে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাফিসা আক্তার বলেন, বিষয়টি জানতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মেয়েটিকে আইনের সহায়তা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আরিফ উর রহমান টগর/ এমএএস/পিআর