চলতি মোম ও মধু সংগ্রহ মৌসুমে ডাকাত আতঙ্ক মাথায় নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন মৌয়ালরা। এবার মধু মহলে ঢোকার আগেই নৌকা প্রতি ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী। আর বনে যাবার আগেই এ টাকা দিতে হচ্ছে মৌয়ালদের।মৌয়ালরা জানায়, তারা এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবনের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের অধীন কয়েকটি ফরেস্ট স্টেশন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করেন। আগে বাঘের আক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকতে হতো। আর এখন সেই ঝুঁকির পাশাপাশি বনদস্যুদের হামলার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে বনে যেতে হচ্ছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ এপ্রিল থেকে প্রথম পর্যায়ে মধু সংগ্রহের জন্য খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৫০ কুইন্টাল বা ৫ হাজার ৬২৫ মণ মধু ও ৫৯০ কুইন্টাল বা ১ হাজার ৪৭৫ মণ মোম। এ পর্যন্ত দুটি রেঞ্জের আওতাধীন ফরেস্ট স্টেশন থেকে ১০৩টি অনুমতি নিয়েছেন মৌয়ালরা। এসব অনুমতিতে প্রায় ১২শ’ জন মৌয়াল মোম ও মধু সংগ্রহে এক মাসের জন্য বনে প্রবেশ করতে পারবে। জনপ্রতি এবার সরকারি রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩০ টাকা। মৌয়ালরা নিরাপদে মোম মধু সংগ্রহ করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।সুন্দরবন সংলগ্ন মঠবাড়ি গ্রামের মৌয়াল মুসা গাজী জানান, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মধু সংগ্রহের পরিমান বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বনদস্যুদের তৎপরতার কথা ভেবে আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। একই গ্রামের মজিবার মোড়ল জানান, তাদের আট সদস্যের একটি দল মধু সংগ্রহের জন্য বনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বনদস্যুদের পক্ষ থেকে আগেভাগেই নৌকা প্রতি ২০ হাজার টাকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, সুন্দরবনে এসব এলাকায় বর্তমানে ইলিয়াস, আনারুল, আলিম ও তালেব বাহিনীসহ ৫/৬টি ছোট-বড় দস্যুবাহিনী তৎপর রয়েছে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে গেলে চালান তুলে আনাই কঠিন হবে। মৌয়ালদের কয়েকজন সরদার জানান, এবার মধু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বনদস্যুদের চাঁদার পরিমাণ বেড়েছে। গত বছর নৌকা প্রতি এক মাসের জন্য ১০/১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। এবার দাবি করা হচ্ছে ২০/২৫ হাজার টাকা। তারা বলেন, ‘মৌ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মৌ মহলে যেতে হচ্ছে। ডাকাতের টাকা, দাদনের সুদ ও আসল, ফরেস্টারগে বাড়তি টাকাসহ অন্যান্য খরচ কইরে বন থেকে ফিরে লোকসান গুণতি হয় কিনা বুঝতি পারতিছি নে।’এসব মৌয়ালরা দাবি করেন, মধু সংগ্রহের মৌসুমে সুন্দরবনের গহীনে কোস্টগার্ডের পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল দেয়ার ব্যবস্থা করলে তারা নির্বিঘ্নে মধু ও মোম সংগ্রহ করে লোকালয়ে ফিরতে পারবেন। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ওসমান গনি বলেন, সুন্দরবনে সব সময় বনদস্যুদের তৎপরতা কমবেশি ছিল। এখনো রয়েছে। বনে ঢোকার আগে মৌয়ালরা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বলে শুনেছি। এসব বিষয়ে মৌয়ালরা আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেন না। এমনকি বনদস্যুদের আটকের ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, বনজীবীরা বনদস্যুদের কাছে নির্যাতিত হলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। বরং গোপনে তাদের সঙ্গে মিটমাট করে নেন। সুন্দরবন অনেক বড় এলাকা। বনজীবীদের সহযোগিতা পেলে দস্যুদের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব।আলমগীর হান্নান/এসএস/পিআর
Advertisement