আন্তর্জাতিক

ফ্রান্সে তারুণ্যের জয়গান

৩৯ বছর বয়সী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার স্ত্রী নতুন ফার্স্টলেডি ব্রিজিত ট্রনক্সের বয়স ৬৪ বছর। ম্যাক্রোঁ যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনস্থির করেন, তখনই জনসম্মুখে আসেন তার স্ত্রী ব্রিজিত। এর আগে এক প্রকার লুকিয়ে থাকতেন তিনি। কারণ দু’জনের বয়সের ব্যবধান নিয়ে অনেক কটূ কথা শুনতে হয়েছে তাদের।

Advertisement

কিন্তু লোকের কথায় কখনোই কান দেননি ম্যাক্রোঁ। বরং উল্টো বলেছেন, ব্রিজিতের কারণেই তিনি আজকের ম্যাক্রোঁ হতে পেরেছেন। অন্যথায় অনেক পিছিয়ে থাকতে হতো তাকে।

স্ত্রীর সঙ্গে ২৪ বছরের ব্যবধান কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ম্যাক্রোঁর কাছে। সম্পর্কের সূত্রপাতটা বেশ অস্বাভাবিকই বলা চলে। যার শুরু হয়েছিল স্কুল ছাত্র ম্যাক্রোঁর ১৫ বছর বয়সে। সেই সময় ওই স্কুলের শিক্ষিকা ব্রিজিতের প্রেমে মজেছিলেন ম্যাক্রোঁ; যখন ব্রিজিতের চেয়ে ২৪ বছরের ছোট ছিলেন ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ আজকের প্রেসিডেন্ট। ব্রিজিত তখন তিন সন্তানের জননী।

পরিবার তাদের সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। স্কুলের নাটকের শিক্ষিকা ব্রিজিতের মন ধীরে-ধীরে ঠিকই জয় করেন তিনি। অবশেষে আগের স্বামীকে ছেড়ে ব্রিজিত ২০০৭ সালে বিয়ে করেন ম্যাক্রোঁকে।

Advertisement

প্রথম দফার নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে যে দু’জন প্রার্থী ভোটে এগিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ম্যাক্রোঁ। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাক্রোঁ জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর পরই গণমাধ্যমে চাউর হতে থাকে ব্রিজিতের সঙ্গে তার অসম সম্পর্কের বিষয়টি। অবশ্য গণমাধ্যমে বিষয়টা বেশ ইতিবাচকভাবেই উঠে এসেছে।

বয়সের ব্যবধান ডিঙিয়ে ব্রিজিতের মন জয় অতঃপর প্রেম এবং বিয়ের জন্য তিনি বাহবা পেতে থাকেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর খুটিনাটির সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হতে থাকে। অবশ্য তাতে আন্তর্জাতিক মহলে ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তার পারদ প্রতিনিয়ত বেড়েছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর বিজয়ের পর থেকেই আরেকটি বিষয় আলোচনায় চলে আসে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন ম্যাক্রোঁ। ধারণা করা হচ্ছিল রাষ্ট্র পরিচালনায় একেবারেই নতুন ম্যাক্রোঁ হয়তো অভিজ্ঞ কাউকে বেছে নেবেন। ম্যাক্রোঁর দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেও তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন ৪৬ বছরের এদওয়ার্দ ফিলিপকে।

মধ্য-ডানপন্থি রাজনীতিক ফিলিপের সরাসরি সরকার পরিচালনায় কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সে হিসেবে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের নেতৃত্বে একেবারেই নতুন মুখ। এই ফিলিপ কিন্তু ম্যাক্রোঁর নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্যও নন। মধ্য-ডানপন্থি রিপাবলিকান পার্টির ফিলিপকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন তিনি। এদিক দিয়েও বেশ উদারতার পরিচয় দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।

Advertisement

ফিলিপকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই ফ্রান্সের তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে আলাপ-আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ তরুণই এই নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন। অবশ্য ম্যাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সে আলোচনা শুরু হয়েছিল।

এর আগে সম্রাট নেপোলিয়ন মাত্র ৪০ বছর বয়সে দেশটির শাসক হয়েছেলেন। নেপোলিয়নের পর ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ শাসক হলেন ম্যাক্রোঁ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ম্যাক্রোঁ নবীন কাউকে বেছে নেওয়ায় তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনাও বাদ যায়নি।

ম্যাক্রোঁর চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জড়ানো হচ্ছে এসব আলোচনায়। ইতোমধ্যেই আপত্তিকর মন্তব্য, উদ্ভট সিদ্ধান্তের জন্য অনেক সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বয়স্ক ট্রাম্পের ইমেজ ঝাপসাই বলা চলে। সেদিক থেকে ম্যাক্রোঁর ব্যক্তিত্ত্ব অনুকরণ করার মতো।

তাছাড়া মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়সের ব্যবধানকে নেতিবাচকভাবেই তুলে ধরেছে বেশ কিছু গণমাধ্যম। অনেকে মেলানিয়াকে ট্রাম্পের মেয়ের বয়সী বলেও উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে অনেক আপত্তিকর মন্তব্যও লক্ষ্য করা গেছে। অপরদিকে, স্ত্রীর বয়স বেশি হওয়ার পরেও ম্যাক্রোঁ পেয়েছেন বাহবা আর প্রেমজয়ীর মর্যাদা।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিলিপের নাম ঘোষণার আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফিলিপ অতোটা পরিচিত নাম ছিলেন না। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর লি হারভের মেয়র ছিলেন তিনি। এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কোটি কোটি মানুষ এখন তাকিয়ে আছে ফ্রান্সের এই নতুন নেতৃত্বের দিকে। এখন দেখার বিষয় এই নির্বাচিত নতুন নেতারা কি করেন। নির্বাচনে জনগণের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া নতুন নেতৃত্ব জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে তো?

কেএ/টিটিএন/জেআইএম