জাতীয়

চলে গেলেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ

বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্পের পুরোধাদের একজন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার ভাস্কর নভেরা আহমেদ মারা গেছেন। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে প্যারিসের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে দীর্ঘ অন্তরাল জীবনের পর গত বছর ১৭ জানুয়ারি থেকে প্যারিসে তাঁর কাজের রেট্রোসপেকটিভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-এ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক-এ ভূষিত করে। ১৯৩০ সালে সুন্দরবনে বাবার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করা নভেরা আহমেদ ব্যক্তি জীবনে দারুণ আলোচিত ছিলেন তাঁর বৈপ্লবিক জীবনচর্চার কারণে। তাঁর কাজেও এই বিপ্লবের সমান প্রবাহ। নভেরার বেশকিছু ভাস্কর্যে আবহমান বাংলার লোকজ আঙ্গিকের আভাস পাওয়া যায়। তবে লোকজ ফর্মের সাথে সেখানে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়ও বর্তমান। লোকজ টেপা পুতুলের ফর্মকে সরলীকৃত করে তাকে দক্ষতার সাথে বিশেষায়িত করেছেন তিনি। এভাবে ঐতিহ্যের সাথে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বার্থক ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা তার আধুনিক চিন্তার লক্ষণ। এক্ষেত্রে তার ভাস্কর্যগুলো আদলে তিনকোনা, চোখ ছিদ্র, লম্বা গ্রীবা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে আসে।তার কাজের প্রধান দিক হচ্ছে নারীদের প্রতিমূর্তি। সমসাময়িক পুরুষ শিল্পীরা ইউরোপীয় ইন্দ্রিয় সুখাবহ নারীদেহে একটি রোমান্টিক ইমেজ দেবার চেষ্ট করেন। এমনকি জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসানরাও নারীকে মাতা, কন্যা, স্ত্রী এবং অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখালেও নারীদের যথার্থ কর্মময় জীবন উহ্যই ছিল। তিনি নারীকে দেখলেন সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে, পুরুষ শিল্পীদের উপস্থাপনার বিপরীতে। তার কাজে নর-নারীর কম্পোজিশন একটি ঐক্য গঠন করে। তিনি ভাসা ভাসা সুন্দর আনন্দময়ী আদর্শ ফর্ম গঠন করতে চান নি। তার ফর্মগুলোকে সরল, অর্থপূর্ণ, স্বকীয়তায় সমৃদ্ধ করেছেন। উন্মোচন করেছেন সবধরণের বিচলিত, আবেগমথিত, সত্যিকারের নারীর রূপকে। মা শক্তিদায়ী, সংকল্পবদ্ধ, অকপট, মৌন আকর্ষণরূপে উদ্ভাসিত। `দ্য লং ওয়েট` কাজটি তারই নমুনা। তার মায়েরা সুন্দরী নয়, কিন্তু শক্তিময়ী, জোরালো ও সংগ্রামী। কখনো কখনো তারা মানবিকতার প্রতীক। বৃটেনের সমালোচক ম্যারি মারশাল নভেরার `দ্য লং ওয়েট` কাজটি সম্পর্কে বলেন যে- `এটি অত্যন্ত চমৎকার ও অদ্ভুত উদাহরণ যেখানে হতাশায় পিছিয়ে পড়া নারী মুক্তির পথ খুঁজছে দৃঢ়তার সাথে।` ১৯৭৩ সালের পর নভেরা আহমেদ দেশত্যাগ করেন এবং প্যারিসে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন, কিন্তু বড় কোন আঘাত পাননি। কিন্তু ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে স্ট্রোকের ফলে তাঁর স্বাস্থ্য নাজুক হয়ে পড়ে। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি চলাফেরা ও তাঁর কাজকর্ম করতেন। ১৯৬১ সালে ভাস্কর হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি; পরে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে জীবনী উপন্যাস রচিত হয়েছে (নভেরা, হাসনাত আবদুল হাই, ১৯৯৪, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৫), নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র (নহন্যতে, এন রাশেদ চৌধুরী, ১৯৯৯)। জাদুঘরের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ হল`। নভেরা আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।এসআরজে

Advertisement

  নভেরা আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। - See more at: http://www.dhakatimes24.com/2015/05/06/64986/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6,-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%95#sthash.IkWfuN46.dpuf