জাতীয়

আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা ও ভাতা বাড়ছে

আগামী (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ ধরনের ভাতার হার বাড়ছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে উপকারভোগীদের একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) ভেরিফিকেশন-সাপেক্ষে প্রথমে একটি সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

এতে দরিদ্র, বিধবা নারী, সচ্ছল-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, দরিদ্র মা, বয়স্ক নাগরিকসহ সব উপকারভোগীকে একই প্লাটফর্মে আনা হবে। এ ডাটাবেজ তৈরির জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে পৃথক বরাদ্দও রাখা হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ১০ ধরনের ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা নারীদের জন্য ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি, হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতা, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতা বাড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

এছাড়া আগামী অর্থবছর থেকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরাও বিশেষ আর্থিক সুবিধা পাবেন। এসব ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। এসব বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মনিটরিং ও জবাবদিহিতার যে মডেল তৈরি করেছে, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া দরকার। তাহলে বিদ্যমান সম্পদ দিয়েই এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। দরিদ্র মানুষের আয় বৃদ্ধির ওপর নজর দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতাপ্রাপ্তরা জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকা করে পাবেন। একই সঙ্গে উপকারভোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৩১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩৫ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে তারা এ হারে ভাতা পাবেন। আর উপকারভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১০ ভাগ বাড়িয়ে ১২ লাখ ৬৫ হাজার করা হচ্ছে।

Advertisement

আগামী অর্থবছর থেকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীরা ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। উপকারভোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে আট লাখ ২৫ হাজার।

আগামী অর্থবছর থেকে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে বিভিন্ন স্তরে প্রদেয় বিশেষ ভাতা/বয়স্ক ভাতা ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৯৭০ জন থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে সাত হাজার ৫৫০ জন।

বর্তমানে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে উপকারভোগীরা মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা পান। আগামী অর্থবছর থেকে তারা ৭০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এজন্য সরকারকে এ খাতের বরাদ্দ ছয় কোটি ৩২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৪০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১২০০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে উপকারভোগীর সংখ্যা শুধু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার এবং ৭০ হাজারের স্থলে ৮০ হাজার করা হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির অধীনে বরাদ্দ ৩০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রতিজন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন।

চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে খাদ্য সহায়তার পরিবর্তে উপকারভোগীদের জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

এমইউএইচ/এমএআর/আরআইপি