বিশেষ প্রতিবেদন

সিঙ্গাপুরে ৩০ দিনে বিদ্যুৎ সংযোগ, বাংলাদেশে লাগে ৪২৯ দিন

গত পাঁচ বছরে দেশের অবকাঠামো খাতে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বদলায়নি বিনিয়োগের চিত্র। কোনোভাবেই বিনিয়োগের খরা কাটছে না। প্রতি মাসেই কমছে নিবন্ধন। এভাবে টানা কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগের দুর্দিন চলছে।

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবায়নের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য অনুকূল পরিবেশের উপর দায় চাপানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, জমি রেজিস্ট্রেশন, ঋণের সুদের হার, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানীমূলক চার পর্বের নিবন্ধের দ্বিতীয় পর্ব আজ প্রকাশিত হলো-

সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ৮ শতাংশ জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জনে ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে জিডিপিতে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বিনিয়োগ বিদ্যমান। তাই স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বরাবরই হা-হুতাশ করছে বাংলাদেশ। বিপুল আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগ করতে এসে এ দেশের নানা আইনি-বেআইনি ব্যবস্থার জটিলতায় পড়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বিদেশিদের। সস্তাশ্রম ও ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে জিএসপি সুবিধার হাতছানিতে ছুটে আসা বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিমুখ হতে যেন সময় লাগে না।

Advertisement

খোদ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সময় লাগে ৪২৯ দশমিক ৯ দিন। অথচ এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশ সিঙ্গাপুরে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ দিন। দেশে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি অন্যতম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সর্বনিম্ন ২৮ দিনে কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব সে পথও বাতলে দিয়েছে বিডা। বিডার প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

গবেষণায় বিডা বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ব্যবসার পরিবেশ সূচককে আমলে নিয়েছে। ১০টি খাতের ১০টি সূচককে একত্রিত করে সার্বিক সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ১৭৬ নম্বরে। আর শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৮৭তম।

স্থানীয় ও বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ১০টি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছে বিডা। এসব খাত নিয়ে পর্যায়ক্রমে গবেষণা ও সুপারিশমালা প্রস্তুত করছে সরকারি সংস্থাটি। সম্প্রতি সংস্থাটি প্রথম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার সমস্যা এবং তা সমাধান শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

Advertisement

বিডার ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেশী ১৭টি এশিয়ান দেশের বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়ার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে ৯টি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়, ভুটানে যা ৪ প্রক্রিয়ায় এ সংযোগ পাওয়া যায়, কম্বোডিয়ায় ৪ প্রক্রিয়ায়, চীনে ৫ দশমিক ৫ প্রক্রিয়ায়, হংকংয়ে ৩, ভারতে ৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৪ দশমিক ৮, লাওসে ৬, মালয়েশিয়ায় ৪, নেপালে ৫, পাকিস্তানে ৫ দশমিক ৩, ফিলিপাইনে ৪, সিঙ্গাপুরে ৪, শ্রীলঙ্কায় ৫, থাইল্যান্ডে ৫, কোরিয়ায় ৩ এবং ভিয়েতনামে ৫ প্রক্রিয়ায় এ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে হয়।

এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাংলাদেশে সময় লাগে ৪২৯ দশমিক ৯ দিন, ভুটানে ৬১ দিন, কম্বোডিয়ায় ১৭৯ দিন, চীনে ১৪৩ দিন, হংকংয়ে ২৭ দিন, ভারতে ৪৫ দিন, ইন্দোনেশিয়ায় ৫৮ দিন, লাওসে ১৩৪ দিন, মালয়েশিয়ায় ৩১ দিন, নেপালে ৭০ দিন, পাকিস্তানে ১৮১ দিন, ফিলিপাইনে ৪২ দিন, সিঙ্গাপুরে ৩০ দিন, শ্রীলঙ্কায় ১০০ দিন, থাইল্যান্ডে ৩৭ দিন, কোরিয়ায় ১৮ দিন এবং ভিয়েতনামে ৪৬ দিন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ৯টি প্রক্রিয়া হলো- সাবস্টেশন ছাড়পত্র; আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ইন্সটলউশনের অনুমতি; সাবস্টেশন তৈরির মালামাল কেনার উপযুক্ত বৈদ্যুতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি; প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতর কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স; ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বরাবর ইস্টিমেটসহ আবেদন জমা; সাবস্টেশনের বাইরের কাজ করার জন্য একটি বৈদ্যুতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ; ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সোলার প্যানেল স্থাপন; বৈদ্যুতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে মিটার ক্রয় এবং মিটার টেস্টিং, ইনস্টলিউশন, বৈদ্যুতিক চূড়ান্ত পরিদর্শন ও বিদ্যুৎ-সংযোগ।

গবেষণার আলোকে শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে বিদ্যমান সমস্যা এবং সেগুলো অতিক্রম করার সুপারিশমালা দিয়েছে সংস্থাটি। বিডা প্রদত্ত সুপারিশসমূহ হলো- বিদ্যুৎ পাবার জন্য সকল আবেদন অনলাইনে করতে হবে; অনলাইনে আবেদনের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে অথবা বিদ্যমান সফটওয়্যারটি বিডার সুপারিশমালা অনুযায়ী বাস্তবায়নের জন্য আধুনিকায়ন করার দরকার হবে; বিদ্যুতের সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদর্শন করতে হবে- এমন কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই। তাই এ দুই সনদপত্র ব্যতীত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া যেতে পারে। তবে বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রদানের সময় ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদফতরে বিদ্যুৎ-সংযোগ সক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে, যাতে এ বিভাগসমূহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে; পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে; জেলা/উপজেলা পর্যায়ে পরিবেশ অধিদফতরের অফিস না থাকলে কিংবা অফিস স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সাময়িক পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে; সাবস্টেশন স্থাপনের পূর্বে প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শককে আগে তথ্য পাঠানোর প্রয়োজন নেই। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং আইনেও নেই। অথচ বিশ্ব ব্যাংক এটিকে একটি আলাদা প্রক্রিয়া বলে ধরেছে; ট্রেড লাইসেন্সের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলতে ওয়ার্ড কমিশনার/উপজেলা চেয়ারম্যান/ইউএনও/এডিসি/ডিসি/জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান/জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/বিভাগীয় কমিশনারকে বুঝানো যেতে পারে; রাস্তা খনন না করে ড্রিলিং প্রক্রিয়ায় ভূগর্ভস্থ সরু ছিদ্র তৈরি করে সেই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক তার টানা যেতে পারে। এ কাজ করার সময় সিটি কর্পোরেশনের যেকোনো কর্মকর্তা উপস্থিত থাকতে পারেন। আর সিটি কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা না প্রেরণ করলে ঠিকাদার সিটি কর্পোরেশেনের নির্দেশনা অনুযায়ী, কাজসংশ্লিষ্ট যেকোনো প্রকৌশলীর অধীনে কাজটি করবে; প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শকের অফিসে কর্মকর্তার/প্রকৌশলীর স্বল্পতা দূর করতে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন সংযোগের ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষমতা প্রতিটি বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে দেয়া যেতে পারে; যদি সাবস্টেশন যথাযথভাবে তৈরি না হয় তাহলে প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শকের অফিসের ফি’র চারভাগের একভাগ গ্রাহককে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঠিকাদারের ভুলের কারণে এটি হয়ে থাকে। তাই জরিমানা তারই দেয়া উচিত। এ কারণে শাস্তির নিয়মও বদলানো উচিত। জরিমানার অর্থ ঠিকাদারের লাইসেন্স নবায়নের সময় আদায় করা যেতে পারে; লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদারগণের নাম বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে; সোলার প্যানেল স্থাপনে বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে হবে। তবে সোলার প্যানেল স্থাপন অপশনাল করা যেতে পারে। যদি কোনো গ্রাহক সোলার প্যানেল স্থাপনে সম্মত না হন, তাহলে ৫০ থেকে ২৫০ কেভিএ লোড কানেকশনের জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা এবং ২৫০ কেভিএর অধিক লোডের সংযাগের জন্য ৫০ হাজার টাকা গ্রিন এনার্জি ফান্ডে ডিপোজিট করতে হবে; রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গ্রাহককে জামানত হিসাবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়, যা সংযোগ খরচ বাড়িয়ে দেয়। তাই সিটি কর্পোরেশনে দ্বিগুণ অর্থ জামানতের নিয়মটি বাতিল করে দেয়া যেতে পারে; আগামী দুই বছরের মধ্যে শতভাগ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা যেতে পারে; প্রি-পেইড মিটার সিস্টেম চালু হলে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে জামানত রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের বিষয়ে যে বিধি-নিষেধ ছিল তা বাদ দিতে হবে; নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারী নিয়োগ জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে আউটসোসিং পদ্ধতিতে এসব নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ও দক্ষ লোকবল না থাকায় বড় বড় পাওয়ার প্লান্টগুলোর কাজ দেওয়া হয় বিদেশি ঠিকাদারদের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের এমপ্লয়িদের দক্ষ করে তোলার একটি শর্ত দেয়া হয়। কিন্তু বিদেশি ওইসব ঠিকাদাররা বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের সবক্ষেত্রে যথাযত সময়ে দক্ষ হওয়ার সুযোগ দেয় না। যদি বিদেশি প্রকৌশলীরা মেয়াদ শেষে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের নিকট জেনারেটর অপারেশনের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় এবং নূন্যতম ছয় মাসের মধ্যে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তবে তার ক্ষতি উভয় পক্ষকে বহন করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। এক্ষেত্রে উভয়ের জন্যই রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি পারসেন্টেজ উল্লেখ করে দেয়া যেতে পারে। এটি অবশ্যই কনট্রাক্ট করার সময় ভালোভাবে উল্লেখ থাকতে হবে; বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সকল স্কুল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ পেতে বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণ এবং সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে বিডার সুপারিশমালা হলো- বাংলাদেশে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ৯টি ধাপের পরিবর্তে মাত্র তিনটি ধাপে এবং ৪২৮ দশমিক ৯ দিনের পরিবর্তে মাত্র ২৮ দিনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। প্রথম ধাপে অনলাইনে বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইন ব্যতীত কোনো আবেদন গ্রহণ না করার জন্য বিডার গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে।

আবেদনের সময় যে কাগজপত্রগুলোর প্রয়োজন হবে সেগুলো হলো- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি, জমির মালিকানাসংক্রান্ত দলিল, সংশ্লিষ্ট বিল্ডিংটি ডেভলপার কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও জমির মালিকের চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, বিল্ডিংটির বৈদ্যুতিক মিটার রুম ও সাবস্টেশনের স্থান উল্লেকপূর্বক রাজউক বা যথাযত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্লান পাসের কপি, বর্তমান সংযোগের বিবরণ ও বিলের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), সংশ্লিষ্ট জমিটি খাস/ভেস্টেট অথবা সরকারি সম্পত্তি নয় এ মর্মে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সনদ, বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সংযোগের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, ঠিকাদার কর্তৃক প্রদত্ত অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজ সম্পন্নের সনদ প্রভৃতি।

বিদ্যুৎ-সংযোগের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র বা ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স নেয়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ আইন- ১৯১০ এর কোথাও নেই। অন্যদিকে যেহেতু রাজউক তথা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অ্যাপ্রোভালের ক্ষেত্রে যেসকল প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বিদ্যুৎ-সংযোগের ক্ষেত্রে সেসকল প্রমাণপত্রের আর কোনো প্রয়োজন নাই।

যদি এক্সটারর্নাল ওয়ার্কের জন্য রাস্তা কাটা বা রাস্তা ব্যবহারের দরকার হয়, তবে তা সর্বোচ্চ ৬ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। রাস্তা কাটার আবেদন সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পেয়ে যাবেন। তিনি যদি ৬ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে যে, তিনি রাস্তা কাটার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছয় দিনের মধ্যে কেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করলেন না, তার জন্য একটি শোকজ লেটার তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে উপস্থাপিত হবে।

দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে ইলেক্ট্রিক লাইসেন্স বোর্ড কর্তৃক সাবস্টেশন পরিদর্শন। যদি সাবস্টেশন নির্মাণ যথাযথভাবে পাওয়া যায়, তবে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়ার জন্য তারা সুপারিশ করবে এবং এটি ১০ দিনের মধ্যে করতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকেন, তবে ধরে নিতে হবে যে, তারা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ১০ দিনের মধ্যে কেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করেননি, তার জন্য একটি শোকজ লেটার তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে উপস্থাপিত হবে।

আর তৃতীয় প্রক্রিয়াটি হলো- বৈদ্যুতিক প্রবাহ বা সংযোগ সংক্রান্ত। প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শক কর্তৃক সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হবার পর বিদ্যুৎ বিভাগ ডিমান্ড নোট তৈরি করবে এবং সেই ডিমান্ড অনুযায়ী অর্থ আবেদনকারীর নির্দিষ্ট একাউন্ট থেকে ডেবিট হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের একাউন্টে ক্রেডিট হয়ে যাবে।

বিডা সচিব অমিত কুমার পাল জাগো নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ব্যবসার পরিবেশ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৭৬ নম্বরে। ২০২১ সালের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ ধাপ কমিয়ে কীভাবে প্রথম ১০০ দেশের তালিকায় আনা যায়, তার কর্মপরিকল্পনা হতে নিয়েছে বিডা। এজন্য একে একে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর