বিশেষ প্রতিবেদন

দুই তরুণীর অনেক ছবি দেখেছেন আরও দেখবেন : সাফাতের বাবা

রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগ আনা দুই তরুণীর সঙ্গে প্রধান তিন আসামির অনেক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘তারা সেদিন রাতে এবং এর আগে ও পরে কী কী করেছেন, আরও ছবি পাওয়া যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ।

Advertisement

জাগো নিউজ’র নিজস্ব প্রতিবেদক আদনান রহমানের কাছে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আলোচিত ওই ধর্ষণের ঘটনাসহ অভিযোগ দায়ের করা দুই তরুণী এবং তার প্রতিষ্ঠানে শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের অভিযান প্রসঙ্গে অনেক কথা বলেন। নিচে তা পাঠকের জন্য উপস্থাপিত হলো-

জাগো নিউজ : সবমিলে কেমন আছেন?

দিলদার আহমেদ : খুব একটা ভালো না। পারিবারিক দিক দিয়ে ভালো নেই। নিজের অবস্থাও ভালো না। রাতে মাত্র এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। মানসিক অবস্থাও ভালো না। আমার ওপর অ্যাট এ টাইম সব দিক থেকে ফায়ার হচ্ছে। তবে ভেঙে পড়িনি। আমি আল্লাহপাকের ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহই আমাকে সাহায্য করবেন। কী অবস্থায় আছি জনগণই বিবেচনা করবেন।

Advertisement

জাগো নিউজ : একসঙ্গে আপন জুয়েলার্সের সব শাখায় অভিযান। ৮৫ কোটি টাকার স্বর্ণ জব্দ। ছেলেও রিমান্ডে। বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?

দিলদার আহমেদ : আপন জুয়েলার্স ৪০ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান। আগে কখনও এমন হয়নি। তাই একটু উদ্বিগ্ন। সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স সবই তো দিচ্ছি, এরপরও সময় খারাপ যাচ্ছে। এ মুহূর্তে আমার ছেলের একটা ব্যাপার রয়েছে, একই সময়ে আবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝামেলা হচ্ছে। একটু চিন্তায় আছি।

জাগো নিউজ : ছেলে রিমান্ডে, ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি।

দিলদার আহমেদ : আশা করছি রিমান্ডে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

Advertisement

জাগো নিউজ : বাড়ির কেয়ারটেকার মেহেদীর দাবি, ধর্ষণের অভিযোগ আনা দুই তরুণী আগেও আপনার বাসায় এসেছেন। আপনি বিষয়টি জানেন কিনা?

দিলদার আহমেদ : আমি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকি। মেয়েরা আসতেও পারে। সাফাতের সঙ্গে পরিচয় থাকলে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের অনেক ছবি ছড়িয়েছে। আস্তে আস্তে আরও ছবি পেয়ে যাবেন। ওই ঘটনার (২৮ মার্চ) ৯ দিন পরও তারা সবাই একসঙ্গে পিকনিকে যায়। কী করেছে, ছবিগুলো আপনারা পেয়ে যাবেন।

জাগো নিউজ : গণমাধ্যমে এসেছে আপনার ছেলের দৈনিক হাতখরচ দুই লাখ টাকা। এত টাকা আদৌ কারো হাতখরচে প্রয়োজন হয় কিনা?

দিলদার আহমেদ : আমার ছেলের নামে কোনো সম্পত্তি কিংবা কিছুই লেখা নেই। আমি এত টাকার মালিক না যে দুই লাখ টাকা হাতখরচ দেব। কোম্পানি থেকে ‘বাবার ব্যবসা দেখাশোনা’ বাবদ সাফাত আহমেদকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা দেয়া হতো। তাকে কোম্পানির কোনো লেনদেন করতে দেয়া হতো না। টাকা কি গাছে ধরে যে দুই লাখ টাকা দেব? যারা এসব রটাচ্ছেন তারা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন। আমার কোম্পানিতে টাকার সব হিসাব আছে।

জাগো নিউজ : ছেলের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে আপনার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। আপনার বক্তব্য কি?

দিলদার আহমেদ : এগুলো নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। মামলা তো হয়েই গেছে। আর্থিক লেনদেন থাকলে পুলিশ আর মামলা নিত না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

জাগো নিউজ : সাফাত গ্রেফতারের পর তাকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে ১০ কোটি টাকার অফার করা হয়েছিল। এমনও অভিযোগ আছে...

দিলদার আহমেদ : (হেসে) আমি কি বাংলাদেশ ব্যাংকের মালিক যে ১০ কোটি টাকা অফার করব?

জাগো নিউজ : ২৮ মার্চ রাতে দ্য রেইন ট্রি হোটেলে কী হয়েছিল- সে বিষয়ে সাফাত আপনাকে কিছু বলেছে কিনা কিংবা তার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন কিনা?

দিলদার আহমেদ : না, এ বিষয়ে তার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা বলার কোনো সুযোগ হয়নি। তবে বাসায় কয়েকবার বলেছে, সে ষড়যন্ত্রের শিকার। আর কিছু বলেনি।

জাগো নিউজ : সাফাতের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর থেকে আপনি বলছেন ‘নাটেরগুরু’ তার সাবেক স্ত্রী পিয়াসা। পিয়াসা তাকে ব্ল্যাকমেইলের জন্য এসব করছেন। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে পিয়াসা ওই দুই তরুণীর খালাত বোন নয়। পিয়াসার সঙ্গে আপনাদের কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা?

দিলদার আহমেদ : আমি প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট করে বিষয়টি আপনাদের (সাংবাদিকদের) বলেছি। এখন আপনারাই বিবেচনা করবেন। এখনও বলব, ওই ঘটনা পিয়াসার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অংশ। পুলিশ তদন্ত করছে। তারাই তদন্তের প্রয়োজনে যা করার করবেন।

ওই ঘটনার পর আজ পর্যন্ত পিয়াসার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ হয়নি।

জাগো নিউজ : পিয়াসার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কথা বলছেন, ঘটনা তো অনেক দূর গড়িয়েছে। আপনারা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা?

দিলদার আহমেদ : আমরা আপাতত এ বিষয়ে কোনো চিন্তা করছি না। সময়ের প্রয়োজনে যখন যা করার তা করব। আপাতত আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় আছি। তদন্ত চলুক, সত্য ঘটনা অবশ্যই বের হয়ে আসবে।

জাগো নিউজ : ধর্ষণ মামলা নিয়ে পুলিশ আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কিনা?

দিলদার আহমেদ : পুলিশ আমার বাসায় ও অফিসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা যা জানতে চেয়েছেন আমি তাদের তা জানিয়েছি।

জাগো নিউজ : শুল্ক গোয়েন্দারা আপনার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করছেন। আপনাকে তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি।

দিলদার আহমেদ : সব নিয়ম মেনে, ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করছি। যেহেতু তারা সরকারের লোক, তাদের রাইট (অধিকার) আছে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার। তারা আমার ব্যবসা ও লেনদেনের হিসাব জানতে চেয়েছেন। সেগুলো দেব। আপন জুয়েলার্সের মাল জব্দের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব।

জাগো নিউজ : গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। তাহলে আপন জুয়েলার্সসহ সবাই কীভাবে স্বর্ণ এনে ব্যবসা করছেন?

দিলদার আহমেদ : এ সেক্টরে কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আমি বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতিতে (বাজুস) থাকতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। বাংলাদেশে সবাই যেভাবে স্বর্ণ ব্যবসা করছে আমিও একইভাবে করছি। বাংলাদেশে স্বর্ণের ইমপোর্ট (আমদানি) বলতে কিছু নেই। বেচা আর কেনা প্রথা চালু রয়েছে। আমরা স্বর্ণ কিনে বিক্রি করি।

জাগো নিউজ : শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান প্রসঙ্গে আপনার মতামত…

দিলদার আহমেদ : সরকারই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে অপরাপর বন্ধুদের সহায়তায় ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তারা। আসামিরা হলেন সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

সাফাত ও সাদমান গত বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।

এআর/এমএআর/আরআইপি