বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গঠন করেন বিএনপি। এরপর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে দেশ শাসন ও বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিএনপি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রায় এই দলটি দীর্ঘ সময় ধরে পালন করে চলছে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা।শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর স্বপ্ন নিয়ে জনমনে বিএনপির বীজ বপন করেন। জনপ্রিয় এই দলটি তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তিন-তিনবার সরকার গঠন করে দেশ শাসন করেছে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখার আলোকে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ১৪০ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও বিএনপি জয়লাভ করে। সর্বশেষ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে। মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হয়।কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের জটিলতায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আক্রোশের কবলে পড়ে বিএনপি। দলটির ওপর নেমে আসে বিপর্যয়। বিএনপিকে খণ্ড-বিখণ্ড করার নানামুখী চেষ্টা চলে। কারাবন্দী হন দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ওই রকম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়নি এ দলটিকে। ওই অবস্থায় চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের হাল শক্তহাতে ধরে রেখেছিলেন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে দলের নেতাকর্মীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে জনমত গঠন করতে থাকেন। একপর্যায়ে তীব্র চাপের মুখে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে আবার প্রবেশ করে বাংলাদেশ। কিন্তু ওই নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল করতে না পেরে বিএনপি বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এর পর থেকে চলছে আন্দোলন-সংগ্রাম।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে দেয়ার পর সেই আন্দোলন আরো ব্যাপকতা লাভ করে। কঠোর আন্দোলন চললেও বিএনপির দাবি মেনে নেয়নি সরকার। সহিংস আন্দোলন দমন করা হয়েছে গুলি চালিয়ে আর মামলার জালে ফেলে। তত্ত্বাধায়ক দাবি আদায় না হওয়ায় গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সেই থেকে আজো লড়াই-সংগ্রাম চলছে ধারাবাহিকভাবেই।বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এক বাণীতে তিনি বলেন, দিনটি আমাদের সবার জন্য আনন্দ ও প্রেরণার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি বিগত ৩৬ বছরে বারবার সবার অংশগ্রহণে জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে এবং দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে কাজ করে গেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রায় আমাদের এই প্রিয় দল অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনের পর গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশব্যাপী পথে-ঘাটে শুধু লাশের মিছিল। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার চার দিকে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করার জন্য নির্লজ্জ দলীয়করণের চূড়ান্ত রূপ দিতে বিচারকদের অভিশংসনের মতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। জনমতের প্রতিফলন যাতে না ঘটে সে জন্য গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে জাতীয় সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে।তিনি এই গণবিরোধী নীতি প্রতিরোধ করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন-সংগ্রামের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন এখন জনগণের হারানো ভোটাধিকার ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। এই আন্দোলনের মূল ল্যই হচ্ছে গায়ের জোরে বাতিল করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।অন্য এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।কর্মসূচিনানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি। রোববার সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ওপর প্রামাণ্য আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৬টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শেরেবাংলা নগরের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। বেলা ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা হবে। বিএনপির জেলা ও মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ইউনিটগুলোও দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
Advertisement