জাতীয়

চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমিরাত যাচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখনও কোনো সুখবর নেই। বাজার উন্মুক্ত হওয়া দূরে থাক, সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিরা আকামা পরিবর্তনই করতে পারছে না। ফলে অবৈধ হচ্ছেন তারা।

Advertisement

এমন অবস্থায় দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেল-জরিমানা আর এক কাপড়ে দেশে ফিরে আসাটাই নিয়তিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের। এ পরিস্থিতি সামলাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনা করতে আমিরাত যাচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমিরাতের বাজার আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশটিতে যাওয়া আমাদের জন্য জরুরি ছিল। কারণ ওই দেশে লোক পাঠানো দূরের কথা, সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাই বেকায়দায় রয়েছেন। তারা আকামা ট্রান্সফার করতে পারছেন না। তাদের জীবনকে সহনীয় করা আমাদের দায়িত্ব। এসব সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর এ সফর অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী। সাত সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বেগম শামছুন নাহার, যুগ্মসচিব মো. মিজানুর রহমান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. মোহসিন চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

Advertisement

সফরকালে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আমিরাতের মানবসম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী সাকর ঘোবাস সাঈদ ঘোবাসের (Saqr Ghobash Saeed Ghobash) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-প্রধানমন্ত্রী লে. জেনারেল সাঈফ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের (Lt. General Sheikh Saif Bin Zayed Al Nahyan) সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে তারা আমিরাতে কর্মী প্রেরণসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

জানা গেছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখের বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৫ জন নারী। দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে।

জানা যায়, ২০১২ সালে সাময়িক ঘোষণায় আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিরা নতুন ভিসা ইস্যু ও অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। পাসপোর্ট খোয়া যাওয়া, রোহিঙ্গা ইস্যু আর সেখানে কিছু বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে আমিরাতের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে কার্যত কাজে আসেনি প্রধানমন্ত্রীর সেই সফর। সেই থেকে এখন পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ে কোনো সফর হয়নি দুই দেশের মধ্যে।

দুই বছর আগে নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর বারবার চেষ্টা করেও দেশটি সফর পর্যন্ত করতে পারেননি। ফলে এটাই হতে যাচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম আমিরাত সফর।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমিরাতের পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ তো আসেইনি, বরং আমরা বারবার দেশটি সফরে যেতে চেয়েছি। এবার তারা সম্মত হয়েছেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে বহুপাক্ষিক কয়েকটি সম্মেলনে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে বন্ধ শ্রমবাজার খোলার বিষয়টি তোলা হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। কেবল প্রতিশ্রুতিই শোনা গেছে। সর্বশেষ জিএফএমডি (গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির প্রতিনিধিরা। সেখানেও ইতিবাচক ইঙ্গিত মেলে। এরপর থেমে যায় সেই প্রক্রিয়া।

তবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর প্রথম আমিরাত সফর ইতিবাচক ফল আনবে সে প্রত্যাশাই করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেপি/এমএমজেড/ওআর/আরআইপি