ধরনীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত ‘মা’। যার পদতলে রয়েছে জান্নাত। ‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। মানুষ যে ডাকে খুঁজে পায় সীমাহীন শান্তি। দুনিয়াতে মা-ই মানুষের একমাত্র নিরাপদ শান্তির ঠিকানা আর পরকালের মুক্তির অনন্য ঠিকানা।
Advertisement
আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার এ দিবসটি পালন করা হয়। সে হিসেবে আজ (১৪ মে, রোববার) পৃথিবীর সর্বত্রই যথাযোগ্য মর্যাদা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
যদিও মায়ের ভালোবাসা কোনো নির্ধারিত দিনক্ষণের ওপর নির্ভর করে না। মা যেখানেই থাকুক মায়ের ভালোবাসা সন্তানের হৃদয়ে থাকবে নিরন্তর সবসময়।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
Advertisement
পরে ১৯৬২ সালে দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয়ে আসছে।
মায়ের ভালোবাসা যেমন কোনো দিনক্ষণ দিয়ে হয় না; তেমনি মায়ের ভালোবাসা হয় সম্পূর্ণ শর্তহীন। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবদি মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে সুন্দর সুন্দর অসংখ্য ছন্দ, কবিতা, গান ও ছড়া।
মায়ের ভালোবাসা, মায়ের জন্য ভালোবাসা ও খিদমত প্রসঙ্গে রয়েছে কুরআন হাদিসে অসংখ্য উপদেশমালা।
কবির ভাষায়- ‘মা বড় ধন সবচে আপন, নেইকো যাহার তুল্য; এক ফোঁট দুধ অনেক দামি, কে দিবে তাঁর মূল্য’।
Advertisement
অন্য কবির ভাষায়- ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেন ভাই; ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’
আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে রহমতের সুধা দিয়ে প্রতিটি মাকে সৃষ্টি করেছেন। মা সন্তানের জন্য করুণার আধার। সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা, করুণা ও মমত্ববোধ আল্লাহর অশেষ কুদরতেরই নিদর্শন। তাইতো সন্তানের দুনিয়া ও পরকালের সফলতা মায়ের সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে।
মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন শুধুমাত্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য নয় বরং সমগ্র প্রাণিজগতের জন্য। সন্তান যখন কোনো বিপদাপদে পড়ে, তখন কারো ব্যাথা না লাগলেও মায়ের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বন্ধ হয়ে যায়।
কবি বলেন, ‘বিদেশে-বিরাজ্যে যাদের সন্তান মারা যায়; পশু-পাখি না জানিতে আগে জানে মায়’-এ কারণেই দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি খেদমত পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র মায়ের।
কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সত্য হলো- আল্লাহ তাআলা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হকের পর সবচেয়ে বেশি আবশ্যক পালনীয় হলো মায়ের হক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওঠে এসেছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদিসে-
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবির নাম আলকামা। মৃত্যুকালীন সময়ে তাঁর জবান থেকে (তাওহিদের) কালেমা বের হচ্ছিল না। বিশ্বনবি এ খবর শুনে আলকামার ঘরে ছুটে গেলেন এবং আলকামার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি পুত্রের ওপর অসন্তুষ্ট?
উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার ছেলে আমার চেয়ে তার স্ত্রীকে বেশি গুরুত্ব দিত। এ কারণে আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
তখন বিশ্বনবি উপস্থিত সাহাবাগণকে নির্দেশ দিলেন, কাঠ সংগ্রহ করে আলকামাকে জলন্ত আগুনে পুড়ে শেষ করে দাও।
আলকামার মা এ কথা শুনে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার চোখের সামনে আমার সন্তানকে আগুনে জ্বালিয়ে দিলে আমি মা হয়ে কিভাবে তা সহ্য করব?
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আলকামার মাকে অনুরোধ করলেন, হে আলকামার মা! তাহলে আপনানি আলকামাকে ক্ষমা করে দিন।
নতুবা আলকামা আপনার অসন্তুষ্টির কারণে পরকালে অনন্তকাল ধরে জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। তখন আপনি তা কী করে সহ্য করবেন?
একথা শুনে আলকামার মায়ের মন নরম হয়ে যায়, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর আলকামার জবানে (তাওহিদের) কালেমা জারি হয়ে যায় এবং কালেমা পড়তে পড়তেই ঈমানের সাথে হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হয়।
এ হলো মা। মায়ের দৃষ্টান্ত এমনই। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, মা তার সন্তানকে শর্তহীনভাবে ভালোবাসেন।
তাই পৃথিবীর সব সন্তানের উচিত, শুধু মা দিবসে মাকে ভালোবাসা জানানো নয় বরং দুনিয়ায় প্রতিটি দিনই শর্তহীনভাবে মাকে ভালোবাসা। মায়ের খেদমত করা। মায়ের হক যথাযথভাবে আদায় করা।
কেননা সন্তানের প্রতি মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। দুনিয়ার সফলতা ও পরকালে জান্নাত প্রাপ্তিতে মায়ের প্রতি সদাচরণ করা সন্তানের জন্য আবশ্যক করণীয়।
মায়ের অবাধ্যতার কারণে সন্তান যেমন দুনিয়াতে লাঞ্ছনার শিকার হয় তেমনি পরকালে কঠিন আজাবেরও সম্মুখীন হতে হবে।
পরিশেষে...মায়ের হক আদায়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কেননা বিশ্বনবি বলেন, ‘দুনিয়াতে মায়ের দোয়া অতি দ্রুত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ইচ্ছমতো ক্ষমা করতে পারেন।
কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যতার গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। বরং ওই অবাধ্য সন্তানকে এই পার্থিব জীবনেই মৃত্যুর আগে কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন। (বায়হাকি)
হজরত আলকামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুকালীণ ঘটনাই তাঁর জলন্ত প্রমাণ। তাই মহান প্রভুর দরবারে প্রার্থনা। হে আল্লাহ! আপনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভে মাকে শর্তহীনভাবে ভালোবাসার; মায়ের খিদমত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর