জাতীয়

বনানীর ধর্ষণের ভিডিওর অনুসন্ধানে পুলিশ

বনানীর দুই তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের মোবাইলে ধর্ষণের কোনো ভিডিও কিংবা অশ্লীল ছবি পাওয়া যায়নি। তারা ভিডিওটি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার কিংবা ভাইবারের মতো কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য কাউকে পাঠিয়ে নিজেদের মোবাইল থেকে মুছে দিয়েছে কিনা, বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

Advertisement

শনিবার প্রথম দিনের রিমান্ডে অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন তথ্য পেয়েছেন আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তবে ভুক্তভোগী দুই তরুণীর অভিযোগ, ঘটনার দিন ধর্ষকরা ভিডিও ধারণ করে এবং ওই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন, ২৮ মার্চ রাতে নাঈম প্রথম তাদের একজনকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার দেখাদেখি সাফাতও ধর্ষণ করে। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ওই সময় ভিডিও ধারণ করে। ওই রাতে নাঈমই সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছিল।

Advertisement

ধর্ষণ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে শনিবার রাতে এসব তথ্য জানান।

বনানীর আলোচিত দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে গতকাল শুক্রবার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে যথাক্রমে ৬ ও ৫ দিনের রিমান্ড দেন আদালত। শনিবার সকালে তাদের প্রথম দিনের মতো রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, রিমান্ডে অভিযুক্ত দু’জন সেই রাতে কোনো ভিডিও ধারণের কথা অস্বীকার করেছেন। তাদের মোবাইলে কোনো ধরণের ভিডিও কিংবা অশ্লীল ছবি পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্তরা ভিডিওটি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার কিংবা ভাইবারের মতো কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য কাউকে পাঠিয়ে নিজেদের মোবাইল থেকে মুছে দিয়েছে কিনা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়সহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, সেই রাতে ভিডিও করা হয়েছিল কিনা- পুলিশ তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনও হতে পারে আসামিরা ভিডিও করে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পরপরই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) সাফাত ও সাকিফের মোবাইল জব্দ করে। পরে তা তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে কোনো ধরনের ভিডিও শেয়ার করেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছেন। প্রয়োজনে সিআইডির বিশেষজ্ঞদের কাছে পরীক্ষার জন্য জব্দ করা মোবাইলগুলো পাঠানো হবে।

শনিবার সকাল থেকে সাফাত ও সাদমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তদন্ত সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ইসমত আরা এমি।

মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য পৃথক একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। কমিটির অন্যতম সদস্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিমান্ডের প্রথম দিন সাফাত ও সাকিফ মামলার অন্যতম আসামি নাঈম সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। নাঈমের অবস্থানও বলেনি। নাঈমসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ইসমত আরা এমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে রিমান্ডের প্রাপ্ত তথ্যগুলো নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে। রিমান্ড শেষে প্রাপ্ত তথ্যগুলো আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে অপরাপর বন্ধুদের সহায়তায় ধর্ষণের শিকার হন ওই দুই তরুণী। তাদের অভিযোগ, সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয়।

ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুই তরুণী। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

আসামিদের মধ্যে সাফাত ও সাদমান সিলেট থেকে গ্রেফতার হলেও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন এজাহারের দুই নম্বর আসামি নাঈমসহ অপর দুজন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল মোবাইল দিয়ে ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করে। ধর্ষণের কয়েকদিন পর তারা ভিডিও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিলে মামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

এদিকে ধর্ষণ মামলার এক সপ্তাহ পার হলেও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন কথিত এজাহারের অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ, ড্রাইভার বিল্লাল ও সাফাতের দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। তাদের ধরতে পারলে ভিডিওর বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হবে বলে ধারণা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

এআর/এমএআর/জেআইএম