আমি যখন এনজিওতে কাজ করা শুরু করি, সবসময় পলিসি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। যে পলিসিগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবতাম তা হলো এখানে সব মানুষকে নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে কি? হলে তা কাদের নিয়ে, যদি সব মানুষকে অন্তর্ভূক্ত না করা হয় তাহলে কেন এই পলিসি। আর সেই চিন্তাভাবনা থেকে “It For Differently Abled” দের যাএা।আমি কখনো তাদের প্রতিবন্ধি বলতে ইচ্ছুক নই। তারাও ভিন্নভাবে সক্ষম। তাই নামকরন হয় “Differently Abled”যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে ২০০৭ এ আমি “SUSI” পোগ্রামের আ্ওতায় যুক্তরাষ্ট্র স্ট্রেট ডির্প্টমেন্টের অধীনে আমার যাএা শুরু হয় যুক্তরাস্ট্রের সিয়াটলে “গ্রীন রিভার কমিউনিটি কলেজ” এ, একমাস ব্যাপী সেখানে অবস্থান করি আমরা ২০ জন ছএ-ছাএী, সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে। এরপর দেশে ফিরে আসলাম। এ কয়েকবছরে নিজের কাজের ব্যস্ততায় কোথা্ও কখনো কিছু করার চিন্তাভাবনা করিনি। কমিউনিটি নিয়ে ভাবতাম, ভেতর থেকে সবসময় কিছু করার প্রেরণা ছিলো “প্রত্যেকবার ভাবতাম কিছু করবো, “Alumni Engagement Iniuiative Fund” দেখে প্রত্যেকবার চিন্তাভাবনা করতাম প্রকল্প নিয়ে কিন্তূ শেষ পর্যন্ত সমমনা কয়েকজন মানুষের অভাবে তা আর হয়ে উঠতনা। চিন্তাভাবনা মাথা আর মনের ভিতর ঘুরপাক খেতো। শেষ পর্যন্ত কিছু হলো না। পরবর্তিতে আমি আমার পড়াশোনা আর কাজে ব্যস্ত হই । ২০১৩ সাল আসে এখনো মাথায় চিন্তাভাবনা কাজ করছিলো । কিন্তূ মিলছিলোনা, সমমনা মানুষদের অভাবে। সেই সময় হঠাৎ করে আমার সুযোগ হয় আর আমি কিছু সমমনা,মেধাবী তরুণদের দেখা পাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যেখানে “আউটসো্রসিং” এ কে কিভাবে কাজে লাগানো যায় এই মানুষগুলোর জন্য সেটা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়। কিন্তূ প্রশ্ন থাকে কারা হবে অংশগ্রহণকারী।চিন্তাভাবনা করার পর দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধকতা সম্মুখীন তাদের জন্য কি করা যেতে পারে যেনো শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধিকতা তার জন্য অন্তরায় না হয়ে দাড়ায়। এরপর শুরু হয় প্রকল্প লেখা। প্রথমবার প্রকল্প লেখার অভিজ্ঞতা এবং কিছু সমমনা মানুষের সাথে কাজ করা, যারা সবাই তরুন, সে ক্ষেত্রে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।পরবর্তিতে সুখবরটি আসে আমার প্রকল্পটি অনুমোদিত হ্ওয়ার পর। এরপর শুরু হয় প্রতিষ্ঠান খোঁজা আমি কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রানিত আমার সমমনা সহকর্মী ও উৎসাহ দাতাদের কাছে থেকে তথ্য ও উৎসাহ পা্ওয়ার জন্য। বাংলাদেশের বিখ্যত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়্। তাদের মধ্য থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়া পা্ওয়া যায়। তার পরে্ও আমরা দমে যায়নি। চেষ্টা করতে থাকি এটাকে বাস্তবায়নের জন্য। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তপ্ততা, অশান্তময় পরিবেশ কোন কিছুই দমাতে পারেনি আমাদের। যদিও অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তূ হার না মানা চেষ্টা ছিল ভেন্যুর অনিশ্চয়তা, অংশগ্রহনকারীদের অনিশ্চয়তা, কিছু প্রতিষ্ঠানের সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য কিছু করার চেয়ে সুবিধা ভোগের আশা। অবশেষে ২৫শে এপ্রিল বাংলা নতুন বর্ষে পদাপর্ন্ করে এ প্রকল্প, ৩০জন অংশগ্রহনকারী, যার মাঝে মূক ও শ্রবন প্রতিনিধি-২৫জন আর শারিরীক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন ৫ জন। র্ব্তমানে তত্ত্বাবধায়নে আছে মুহাম্মদ আল্ হেলাল, স্বর্ন্ময়ী সরকার, ছাবিকুন্নাহার আর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে রাজীব হালদার ও রিফাত নামের দুই তরুণ।যে সংস্থাগুলো আমাদের অক্লান্তভাবে সাহায্য করছে এবং যাদের কথা না বললেই না- জাতীয় বধির সংস্থা, বিপিকেএস, হিড বাংলাদেশ, ওয়াল্ড হেয়ারিং কনসার্ন্, নাডপো ,হাই কেয়ার স্কুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বরিশাল থেকে আশা একজন রাতুল আর পটুয়াখালীর ফাল্গুনী আমার জন্য একজন অনুপ্রেরণা।ফাল্গুনী সাহা যখন কব্জির মোচড়ে কম্পিউটারে কাজ করেন তখন মনে হয়না তার আঙ্গুল না থাকা তার জন্য প্রতিবন্ধকতা।
Advertisement