উধাও হয়ে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার সড়কে স্থাপিত পুরনো বাতি। নগরী আলোকিত করতে হলুদ আলোর বাতিগুলো সরিয়ে সেখানে অত্যাধুনিক এলইডি (লাইট-এমিটিং ডায়োড) বাতি লাগানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিএসসিসি।
Advertisement
নতুন বাতি স্থাপনের পর সরিয়ে নেয়া বাতিগুলোর কিছু চুরি হয়ে গেছে। নগর ভবন ও এর আশপাশে এবং কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে যত্রতত্র ফেলে রাখায় নষ্টও হচ্ছে অনেক বাতি।
সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসি এলাকার ৫৭টি ওয়ার্ডে হলুদ আলোর ২৫ হাজার সোডিয়াম বাতি ও পোল ছিল। এরই মধ্যে এলইডি বাতি লাগাতে প্রায় সব বাতি ও ক্ষতিগ্রস্ত পোলগুলোর ৮০ ভাগ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সেখানে ৩৭ হাজার ২০০টি অত্যাধুনিক এলইডি বাতি লাগানো হচ্ছে। এরই মধ্যে এলইডি বাতি লাগানোর ৭০ শতাংশ কাজ শেষও হয়েছে।
Advertisement
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ সার্কেল) মো. জাফর আহম্মেদ জাগো নিউজকে জানান, অত্যাধুনিক এলইডি বাতিগুলোর মধ্যে সাত হাজার ৯৫৭টি লোপ্রেশার এবং প্রায় ছয় হাজারের মতো হাইপ্রেশারের সোডিয়াম বাতি রয়েছে। হাইপ্রেশারের বাতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়। লোপ্রেশারের বাতিগুলো অবস্থানভেদে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নতুন এলইডি বাতিতে ঢাকার অধিকাংশ সড়ক ঝলমল করলেও সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া পুরনো বাতিগুলো ঠিকমতো সংরক্ষণ করছে না কর্তৃপক্ষ।
নগর ভবনের বারান্দা, বাগান ও কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর খোলা স্থানে অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে এসব বাতি। ফলে টোকাই ও হকাররা বাতিগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো পুরাতন বাতি খুলে নেয়া হয়েছে এর সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রকৌশলী মো. জাফর আহম্মেদ।
Advertisement
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে পুরাতন বাতিগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক বাতি খুলে যত্রতত্র রেখে দেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক ভালো বাতিও বিকল হয়ে যাচ্ছে।
অথচ কোটি কোটি টাকা মূল্যের এ বাতিগুলো নিলামে বিক্রি করে রাজস্ব আয় করতে পারতো সংস্থাটি। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কর্পোরেশনের শীর্ষপর্যায়ে নানা কানাঘুষা চলছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
যোগাযোগ করা হলে প্রকৌশলী জাফর আহম্মেদ বলেন, ‘কিছু বাতি তো নষ্ট হবেই! কিভাবে সংরক্ষণ করব? জায়গা কই?’
‘ধরেন ১০০টি বাতি খুলে আনলে ৫০টি টেকে, এর মধ্যে আবার ২০টি ফিউজ (অকার্যকর) হয়ে যায়। তবে চুরি হচ্ছে এটা আসলে ঠিক না।’
সরিয়ে নেয়া বাতিগুলো কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জন্য কর্পোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও ফাইলটি পাঠানো হয়েছে।
পুরানো বাতির ৮০ শতাংশ সরিয়ে নিলেও এখনও কমিটির অনুমোদন না হওয়া প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, সেটা কর্তৃপক্ষই ভালো জানে। আমরা ফাইল পাঠিয়েছি।
জাফর আহম্মেদ আরও বলেন, সরিয়ে নেয়া বাতিগুলোর মধ্যে যদি কিছু বাতি ভালো থাকে তাহলে সেগুলো ঢাকার বাইরের পৌরসভাগুলোতে দেয়ার একটা পরিকল্পনা রয়েছে মেয়রের। আর না হলে সেগুলো নিলামেও বিক্রি করে দেয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলইডি লাইটের মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বাতিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগই বেশি বলতে পারবে।
জানা যায়, মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ এলাকাকে আলোকিত করতে মেগা প্রকল্পের আওতায় সড়কে এলইডি বাতি লাগানো হচ্ছে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ নতুন বাতি লাগানো হয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্র বলছে, নব্বইয়ের দশকের দিকে রাজধানীর সড়কে সোডিয়াম বাতি স্থাপন করা হয়। দামি এ বাতি এলইডি বাতির চেয়ে স্থায়িত্ব কম এবং বিদ্যুৎ খরচও বেশি। তাই পুরো নগরীতে এলইডি বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। চীন থেকে এসব বাতি আনা হয়।
এদিকে, সম্প্রতি দায়িত্বের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আগামী জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এমএসএস/এমএমএ/এমএস