দেশজুড়ে

নিহত জঙ্গিদের মরদেহ নেবেন না স্বজনরা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরে জঙ্গি আস্তানার বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত পাঁচ জঙ্গির মরদেহ নেবেন না স্বজনরা। বিকেলে গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা জানান তারা।

Advertisement

তবে এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন নিহত জঙ্গি সাজ্জাদ হোসেনের মা মারজাহান বেওয়ার (৮০)। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছেন তার ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিরা।

মারজাহান বিবি জানিয়েছেন, তার ছেলে দেশবিরোধী। পরিবার নিয়ে তিনি খারাপ কাজে জড়িয়েছে। তাদের উচিৎ শাস্তি হয়েছে। যে কেউ খারাপ কাজ করলে শাস্তি হবেই। তবুও পরিবারসহ ছেলের মৃত্যুতে মায়ের মন কান্না চেপে রাখতে পারছে না তিনি।

সাজ্জাদ হোসেন পরিবার নিয়ে যে বাড়িতে বাস করছিলেন তার প্রায় ৫০০ মিটার দূরে তার ছোট ভাই মুক্তার হোসেনের বাড়ি। মুক্তার হোসেনের সঙ্গে থাকেন তার মা মারজাহান বেওয়া।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়েই কথা হয় তার সঙ্গে। ওই সময় বাড়িতে ছিলেন না মুক্তার। তবে তার স্ত্রী শামিমা বেগম ছিলেন বাড়িতে।

মারজাহান বিবি জানান, পাশের গ্রাম মাছমারায় লুৎফর রহমানের মেয়ে বেলী বেগমের সঙ্গে সাজ্জাদের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর থেকেেই সাজ্জাদ তার শ্বশুর বাড়ির পাশেই বাড়ি করে বাস করছিল।

মাস চারেক আগে শ্বশুরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। এরপর সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লায় কিছুদিন বাসা ভাড়া থাকে। তা দেখে তিনিই বেনীপুরে মাঠের পাঁচ কাঠা ধানি জমি দেন বাড়ি করার জন্য। মাসদুয়েক আগে টিন-মাটি দিয়ে ওই বাড়ি করে সাজ্জাদ পরিবার নিয়ে সেখানে ওঠে।

ছেলের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হত না জানিয়ে মারহাজান জানান, কাছেই বাড়ি তবুও এ দুই মাসে মাত্র দুই বার গেছেন ছেলের বাড়িতে। কিন্তু সেখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখেন নি। বাইরে থাকায় তেমন যোগাযোগও হত না। ফলে তাদের গতিবিধিও জানা ছিল না।

Advertisement

এছাড়া সাজ্জাদের স্ত্রী ও মেয়েরা খুব পর্দাশীল ছিলেন। তাই মুক্তারের বাড়িও তারা খুব একটা যাওয়া-আসা করতো না। সাইকেলে করে ফেরি করে গাঁয়ে গাঁয়ে সাজ্জাদ কাপড় বিক্রি করতেন।

এদিকে, মুক্তার হোসেনের স্ত্রী শামিমা বেগম (৩৫) জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করতেই পারছেন না তারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। কিন্তু লোকমুখে শুনেছেন-তার জা বেলী বেগম অস্ত্র হাতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ছেলে-মেয়েরাও এ সময় তার সঙ্গে ছিল। এখন অবিশ্বাস করার কিছুই নেই। তার তাদের মরদেহ নেবেন না তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার মধ্যরাতের পর থেকেই উপজেলার হাবাসপুর মাঝমারা বেনীপুরের সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। সকাল থেকে মাইকে অবস্থানকারীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। সাড়া না পেয়ে সকালে দমকল কর্মীরা বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে পানি ছেটাতে শুরু করে।

একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা দমকল কর্মী ও পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সেই সঙ্গে ঘটায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। এতে মারা যান গৃহকর্তা সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলি বেগম (৪৮), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭), ছেলে সোয়াইব হোসেন (২৪) ও আল-আমীন (২৬)। এখনো তাদের মরদেহ পড়ে রয়েছে বাড়ির বাইরের কেটে নেয়া ধান খেতে।

ওই সময় জঙ্গি হামলায় মারা যান দমকল কর্মী আব্দুল মতিন। আহত হন আরও চার পুলিশ সদস্য। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন সাজ্জাদের বড় মেয়ে সুমাইয়া বেগম। তার আগে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সুমােইয়ার ছেলে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

এর আগে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সুমাইয়ার ছয় বছরের ছেলে জুবায়ের এবং দেড় মাসের শিশুকন্যা আফিয়াকে। তারা এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকেই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ বলছে, বাড়ির ভেতরে এখনও কোনো জঙ্গি অবস্থান করছে কী না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ জন্য বাড়ির ভেতরে ঢোকা হয়নি। ঘটনাস্থলে আসছে সোয়াত টিম ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। তারা আসার পরই বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানো হবে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/পিআর