দেশজুড়ে

যেভাবে দমকল কর্মীকে হত্যা করলেন নারী জঙ্গি

সকাল থেকে ঘিরে রাখা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর হাবাসপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে গিয়ে মারা গেছেন দমকল কর্মী আব্দুল মতিন (২৯)। আত্মঘাতী নারী জঙ্গির উপর্যুপরি দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।

Advertisement

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পর সকাল পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এর আগে সকাল সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আস্তানা থেকে বেরিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ ও দমকল কর্মীদের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও পালাতে পারেননি আব্দুল মতিন।

এ সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান জঙ্গি। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পুলিশ বলছে, আত্মঘাতী বিস্ফোরণেই মারা গেছেন পাঁচ জঙ্গি। মাটি-টিনের বেড়া আর টিনের ছাউনির বাড়িটার চারপাশে ফাঁকা ধানখেত। মাসখানেক আগে ওই বাড়িতে গিয়ে ওঠেন গৃহকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, সকাল থেকেই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে আহ্বান জানাচ্ছিল পুলিশ। এ নিয়ে মাইকিংও চলছিল। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে দমকল কর্মীরা বাড়িটিতে পানি দিচ্ছিলেন।

Advertisement

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ধারাল অস্ত্র, শাবল ও বল্লম হাতে কয়েকজন নারী-পুরুষ বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা ধাওয়া করেন বাড়িটির আশেপাশে অবস্থান নেয়া পুলিশ ও দমকল কর্মীদের।

এ সময় ঘটানো হয় কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ। এতে অন্যরা পালিয়ে গেলেও পালাতে পারেননি আব্দুল মতিন। একা পেয়ে এ সময় একজন নারী ও একজন পুরুষ মিলে দমকল কর্মী আব্দুল মতিনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করেন। দ্রুত পাশে থাকা পুলিশ গুলি ছুড়েও তাদের ঠেকাতে পারেননি।

একপর্যায়ে জঙ্গিরা পুলিশের দিকেও ধাওয়া করে। পুলিশ গুলি ছুড়ে তাদের ঠেকায়। এর মধ্যেই হামলাকারী জঙ্গিরা সবাই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি আস্তানাগুলোতে যেহেতু প্রচুর বিস্ফোরক থাকে, তাই অভিযানের সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে রাখা হয় পানি ছিটানোর জন্য।

Advertisement

এছাড়া দরজা-জানালা ও দেয়াল ভাঙতেও তারা সহায়তা করেন। প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সহায়তা করেন। এ ধরনের প্রাণরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা বীভৎস।

দমকল কর্মী মতিন গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের মাটিকাটা রেলগেট এলাকার এহসান কবিরাজের ছেলে। তার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলজে হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছে।

মর্গ সূত্র জানিয়েছে, তার শরীরে, বিশেষ করে মাথায় কোপের অনেকগুলো গভীর ক্ষত রয়েছে। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তার বাম কানটি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এদিকে, নিহত দমকল কর্মী আব্দুল মতিনের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম রামেক হাসপাতালে গিয়ে নিহতের স্ত্রী তানজিলা বেগমকে এ কথা জানান তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি হিসেবে সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ই নিহত আব্দুুল মতিনের স্ত্রীকে এ কথা জানান।

উপ-পরিচালক আরও জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) একেএম শাকিল নেওয়াজ ঢাকা থেকে রাজশাহী এসেছেন। তিনিও নিহতের পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আব্দুল মতিনের দাফনের জন্য বিভাগ আরও ১০ হাজার টাকা দিয়েছে।

আর কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় আব্দুল মতিনের পরিবার ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৮ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এছাড়া অধিদফতরের মহাপরিচালক কল্যাণ তহবিল থেকেও পাবেন সহায়তা। তবে সেটা কত টাকা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে, জঙ্গিদের হামলা ও বিস্ফোরণে আহত চার পুলিশ সদস্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তাদের কারও কারও শরীরে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/জেআইএম