ফিচার

‘স্বপ্ন পূরণে’র রাতের অপেক্ষায় ফাতেমারা

নাম ফাতেমা। বয়স আনুমানিক ২৩-২৪ বছর। রাজধানীর আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ দিকের প্রধান প্রবেশপথের বিপরীতে দিকের একটি কোচিং সেন্টারের গেটে বসে গরমে হাঁপাচ্ছিলেন। পাশেই ছোট একটি কাপড়ের পুটলা।

Advertisement

ঠিক তার পাশে ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়ে শিশু। তরুণী পুটলা থেকে পুরান এক টুকরা কাপড় বের করে একবার শিশুটির কপাল আর আরেকবার নিজের কপালের ঘাম মুছছিলেন।

অদূরে কবরস্থানের গেটে ভিক্ষুদের ভিড়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে এ প্রতিবেদকের চোখে এ দৃশ্য ধরা পড়ে।

ফাতেমা জানান, বুধবার রাতের বাসে খুলনা থেকে শিশুটিকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। গত কয়েক বছর ধরে খুলনা থেকে ঢাকায় এসে শবে রাতে কবরস্থানের গেটে বসে ভিক্ষে করেন। এখানে এক রাতে তিন হাজার টাকা হয়, যা নিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি।

Advertisement

গত কয়েক বছর একা এলেও এবার কোলের শিশুটিকে নিয়ে এসে দুঃশ্চিন্তায় আছেন এই মা। কারণ জানতে চাইলে ফাতেমা জানান, শবে বরাতের রাতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায় না।

‘এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বরং গেটের আশেপাশে ঘুরে ফিরে ভিক্ষা চাইলে বেশি টাকা পাওয়া যায়। কেউ টাকা ভিক্ষা দিতে এলে এ সময় একসঙ্গে অনেকজন ভিক্ষুক ভিড় জমায়। এ সময় ভিড় ঠেলে হাত বাড়িয়ে টাকা নিতে হলে শারিরীক শক্তিও প্রয়োগ করতে হয়।’

তিনি বলেন, এবার কোলের শিশুটি সঙ্গে থাকায় বাধ্য হয়ে এক জায়গায় বসেই ভিক্ষা করতে হবে।

সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে ভিক্ষুক আজিমপুর কবরস্থানের চৌহদ্দিতে ভিড় করছেন।

Advertisement

ফাতেমাসহ একাধিক ভিক্ষুকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তাদের প্রায় সবার কাছে শবে বরাতের রাত একটি স্বপ্ন পূরণের রাত! বছরের আর কোনোদিন এক সঙ্গে এতো বেশি টাকা ভিক্ষা পাওয়া যায় না বলে জানান তারা।

আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ দিকের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন ফুটপাতের পাশে মুসুল্লিদের অজু করার জন্য পানির ড্রাম ও কল লাগানো হয়েছে। শবে বরাত উপলক্ষে কবরস্থানের নিরাপত্তারক্ষীদেরও কদর বেড়েছে! বিশেষ করে মৌসুমী ভিক্ষুকরা নিরাপত্তারক্ষীদের টাকা পয়সা দেয়াসহ বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে কবরস্থানের ভেতরে ও প্রধান ফটকের বাইরে সবার অনুমতি নিচ্ছেন।

এমইউ/এমএমএ/এএইচ/পিআর