নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালত সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১১টি ধারা ও উপধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত।
Advertisement
ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালতে সাজাপ্রাপ্ত পৃথক তিন ব্যক্তির দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত তিনটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে তা যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আজ রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হাসান এমএস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন।
রিটকারী ওই তিন ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালত কর্তৃক দেয়া সাজা বাতিল ও তাদের একজনের নিকট থেকে আদায় করা জরিমানার ১০ লাখ রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর রিট আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হলে সরকারকে আইন সংশোধন করতে হবে অথবা নতুন করে আইন তৈরি করতে হবে। তবে এই আইন হতে হবে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সঙ্গে মিল রেখে।
Advertisement
তিনি বলেন, পৃথক দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় বছর আগে এবং অপর একটির রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর আগে এই বিষয়ে রুল হয়েছিল। রুলের ওপর গত মার্চে শুনানি শেষে আদালত রুলগুলোর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন। এরপর আজ বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার জন্য আসে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনটির কয়েকটি বিধান কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন বলেন, তিনটি রিট আবেদনের ওপর আজ রায় ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামরুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।
অন্যদিকে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওইদিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।
Advertisement
এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন।
ওই ১৭ জনের করা রিট আবেদনের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫,৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিন রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল একসঙ্গে শুনানি হয়।
আইনজীবী আজিম বলেন, রিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও বিচার করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই ধারাগুলো সংবিধান, মাসদার হোসেন মামলার রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
ওই আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে। এছাড়া ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া ক্ষমতা, ১৩ ধারায় আপিল ও ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারকে দেয়া ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।
এফএইচ/এআরএস/জেডএ/আরআইপি