বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে কলেজছাত্রী পারুলের আমরণ অনশনের দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার অতিবাহিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিয়ের দাবিতে এই বাড়িতে অবস্থান নেন তিনি।
Advertisement
এদিকে, কথিত প্রেমিক শাকিল বিয়ে না করার প্রত্যয়ে বাড়ি ছেড়ে উধাও। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, ফুলকি পশ্চিমপাড়ার এমডি মাসুদ রানা মান্নানের ছেলে উপজেলা যুবলীগ নেতা শাকিল রানা সচিব ফেসবুকের মাধ্যমে সখীপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান মাস্টারের মেয়ে করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের ছাত্রী পারুল আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে দীর্ঘদিন কথোপকথনের পর গত এক বছর পূর্বে তাদের দেখা হয়। দেখা সাক্ষাতের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। প্রেমিক শাকিল রানার প্ররোচনায় মেয়েটি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
Advertisement
মেয়েটির দাবি একপর্যায়ে শাকিল রানা তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডেটিংয়ে নিয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় শাকিল মেয়েটিকে দ্রুত বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রীর পরিচয়ে ঢাকার আবাসিক হোটেলে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার মেলামেশার অভিযোগ করেন মেয়েটি।
মেয়েটি আরও জানান, গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতারক শাকিল তার সঙ্গে শেষবারের মতো শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
এসব ঘটনার প্রমাণাদি মেয়েটির কাছে আছে বলে দাবি করছেন মেয়েটি। শাকিলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পারুল বিয়ে করার কথা বললে, শাকিল তা অস্বীকার করেন।
শাকিলের এমন প্রতারণামূলক সিদ্ধান্তের কথায় সব হারানো মেয়েটির মাথায় যেন বাজ পড়ে। এমতাবস্থায় মেয়েটি কোনো উপায় না পেয়ে গত ৮ মে (সোমবার) সকাল ৭টার দিকে শাকিলের বাড়িতে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়।
Advertisement
ওদিনই শাকিলের সঙ্গে পারুলের কিছু সময় কথা হওয়ার পর হঠাৎ শাকিল মেয়েটিকে রেখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তখন মেয়েটি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে ঘটনার সমাধানের জন্য শাকিলের স্বজনরা মেয়েটিকে বুঝিয়ে তার অভিভাবকদের আনতে বলে।
দুপুরের পর পারুলের অভিভাবক পক্ষ ঘটনাস্থলে হাজির হলেও শাকিল বা তার কোনো অভিভাবক হাজির হয়নি। পরে ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল মঙ্গলবার সকালে উভয় পক্ষের অভিভাবকদের ঘটনাস্থলে হাজির হতে বলেন।
পারুলের লোকজন উপস্থিত থাকলেও শাকিল ও তার পক্ষের লোকজন উপস্থিত না হওয়ায় ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা যায়। ঘটনাটি দ্রুত সমাধান না হলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে অনশনরত তরুণী পারুল বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শাকিল আমার সবকিছু লুটে নিয়েছে। সে আমাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোনো পথ নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাকিলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি পারুলকে বিয়ে না করার কথা জানান। তিনি বলেন, মাত্র তিন মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পারুলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। প্রেমের মতো কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। কোনো একটি চক্র হয়তো আমাকে ফাঁসানোর জন্য মেয়েটিকে আমার বাড়িতে পাঠিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাসাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/আরআইপি