খেলাধুলা

‘ইংল্যান্ডে মোস্তাফিজের বলে কাটার ধরার সম্ভাবনা কম’

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেমন করবে বাংলাদেশ? অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেমন খেলবেন মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা? ইংল্যান্ডের উইকেট তো পেসারদের জন্য সহায়ক। সেখানে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ আবারও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারবেন তো? তার কাটার-স্লোয়ারে দিশেহারা ভাব ফুটে উঠবে তো প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের ব্যাটে? মারমার, কাটকাট ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত সাব্বির রহমান কী এই টুর্নামেন্টে নিজেকে নতুন করে চেনাতে পারবেন? কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপের মতো মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ইংল্যান্ডের মাটিতে আবারও জ্বলসে উঠবে?

Advertisement

ভক্ত-সমর্থকদের নানা কৌতূহলী প্রশ্ন। অনেক কিছু জানতে মন চায়। সাম্প্রতিক সময়ে মাশরাফি বাহিনীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রত্যাশার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই বাড়তি মাত্রাকে নিচে রাখতে পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বিশেষ করে মোস্তাফিজের কাছ থেকে কাটার, স্লোয়ার কিংবা অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স আশা না করারও পরামর্শ দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের উইকেটে দ্য ফিজের কাটার ধরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সুতরাং তাকে তার মতো খেলতে দেয়ার পক্ষে অধিনায়ক।

সাব্বির রহমান আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত হবেন বলেও বিশ্বাস মাশরাফির। একই সঙ্গে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তার মন্তব্য, দলের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ। যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো পজিশনে দলের হাল ধরার মতো একমাত্র ব্যক্তি হলেন মাহমুদউল্লাহ।

জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা আরিফুর রহমান বাবুর সঙ্গে মাশরাফির বিশেষ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এসব বিষয়ই। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে একদিন আগে। আজ প্রকাশ করা হলো শেষ পর্ব।

Advertisement

জাগো নিউজ : সবাই বলে ইংল্যান্ডের সীমিং কন্ডিশনে মোস্তাফিজের আরও বেশি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনার কি মনে হয়?

মাশরাফি : এটা অনেকখানি নির্ভর করবে উইকেটের ওপর। উইকেট যদি ফ্ল্যাট থাকে তাহলে ততটা কাটার ধরবে না। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডে ট্রু উইকেটেই খেলা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি তাই হয়, তাহলে মোস্তাফিজ খুব বেশি সাহায্য পাবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশের উইকেটে বল ওঠা-নামা করে। সেখানে কাটার ধরে। বরং দেশে তার কার্যকরিতার সম্ভাবনাই বেশি; কিন্তু ইংল্যান্ডে ট্রু পিচে খেলা হলে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেখানে কতটা কাটার ধরবে, আমি সন্দিহান। সত্যি কথা বলতে কী, ট্রু উইকেটে কাটার ধরা খুব কঠিন।

আমার মনে হয়, মোস্তাফিজের কাছ থেকে খুব জলদি ও দ্রুত অনেক কিছু আশা না করাই ভালো। আমার মনে হচ্ছে, আমরা যদি ওর (মোস্তাফিজের) কাছ থেকে খুব বেশি আশা করি, সেটা হবে বাড়তি চাপ, যা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই করবে বেশি। সেটা মনে হয় ঠিক হবে না।

Advertisement

আমাকে বলতে বলা হলে বলব, মোস্তাফিজের কাছ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই শুধু নয়, আপাতত তার কাছ থেকে সামনের এক-দুই বছর বাড়তি কিছু আশা না করাই ভালো। সেটাই বরং খারাপ হবে। ওকে ওর মতো খেলতে দেয়া উচিত কারণ, মাত্র ইনজুরি থেকে উঠে এসেছে। এ ধরনের অবস্থা থেকে উঠে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে এক থেকে দুই বছর লেগে যায়। আর সেখানে আমরা যদি ওর কাছ থেকে এখনই খুব বেশি চাইতে শুরু করি, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

আমার মনে হয় মোস্তাফিজের কাছে আমাদের বড় চাহিদা না থাকাই ভালো। সে মনের আনন্দে খেলছে, সেভাবেই খেলুক। তাকে মনের আনন্দেই খেলতে দেয়া উচিত। তার ওপর এখন অপ্রয়োজনীয় চাপ দিলে বরং ক্ষতি হতে পারে। তা হবে একটা প্রতিভা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নিজের হাতে ধ্বংস কর দেয়ার নামান্তর।

এখনই আসলে আগের মতো তিন উইকেট, চার বা পাঁচ উইকেট নেবে- এমন চিন্তা করা ঠিক হবে না। তা না করে এখন মোস্তাফিজকে বরং আগলে রাখার দায়িত্ব নেয়া উচিত। ওর আত্মবিশ্বাস কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা চিন্তা করা উচিত। সামনের দিনগুলোয় কীভাবে ইনজুরি থেকে মুক্ত থাকা যাবে- সেগুলো নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলা উচিত। ওর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস কী করে বাড়ানো যায়, সেগুলো নিয়ে কথা বলাই হবে যুক্তিযুক্ত। যথাযথ কাউন্সিলিং দরকার; কিন্তু এখনই ওর কাছ থেকে ৩, ৪ আর ৫ উইকেট নিবে- এমন আশা করা হবে বোকামি।

জাগো নিউজ : সাব্বিরের বিষয়ে কিছু বলুন। তার ভূমিকা কী হবে?

মাশরাফি : এটা আসলে কোচের ওপর নির্ভর করছে। আমাদের টিম কম্বিনেশন ও স্ট্র্যাটেজি তো কোচ ঠিক করেন। কোথায় আক্রমণ করব, কোথায় কখন কি করব, তা কোচই ঠিক করেন। আমার তো মনে হয়, সাব্বির তিন নম্বর পজিশনে ভালোই করছে। ফরমেট সাজায় কোচ। আমার মনে হয় ওই জায়গায় সে মোটামুটি সফল।

এখনও ও যা খেলছে তার চেয়ে অনেক ভালো খেলার সামর্থ্য আছে; কিন্তু সেটা শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘিরে নয়। আরও ১০ বছর খেলার সামর্থ্য আছে তার। দিনকে দিন যদি নিজেকে উন্নতি করতে পারে দু-তিন বছর পর দেখবেন অনেক বেশি কার্যকর খেলোয়াড় হয়ে গেছে সে। যদিও এখনই অনেক বেশশি কার্যকর। তারপরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তো আর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে না।

জাগো নিউজ : তাহলে এ মুহূর্তে টিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন কি?

মাশরাফি : চার নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ পজিশন। আমার মনে হয় টেস্ট এবং ওয়ানডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং পজিশন হলো চার নম্বর। যেখানে মুশফিক খেলে। অ্যাংকর রোল প্লে করে চার নম্বর। ওই পজিসনে তার চেয়ে ভাল ও কার্যকর ব্যাটসম্যান আর নেই আমাদের। যে খেলাটাকে পুরোপুরি ধরে রাখে। আর যারা আছে তারা যদি স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে তাহলে এত কঠিন হবে না।

জাগো নিউজ : ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এবার তার কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করছেন?

মাশরাফি : গত দুই বছর তার গড় খুব ভাল। শেষ দুই তিন বছর সে দায়িত্ব নিয়ে অনেক ভাল খেলেছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজটা একটু খারাপ গেছে। ধারাবাহিকভাবে বেশ ভাল খেলেছে; কিন্তু ওই সিরিজটি ছাড়া শেষ দুই মৌসুম খুব ভাল খেলেছে মাহমুদউল্লাহ। সিনিয়রিটি এবং দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারে।

একমাত্র প্লেয়ার যার ব্যাটিং পজিশন বার বার পরিবর্তন হয়েছে এবং তাকে যেখানে খেলানো হয়েছে মোটামুটি পারফর্ম করে গেছে। দলের জন্য সে এখানে-ওখানে খেলেছে। সব মিলে ও একটা কার্যকরি খেলোয়াড় ছিল শেষ দুই-আড়াই বছর। আমার আশা মাহমুদউল্লাহ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বিগ রোল প্লে করতে পারে। হি ইজ এ বিগ টুর্নামেন্ট প্লেয়ার।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস