জাতীয়

সেই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রাখেনি ‘রেইন ট্রি’ হোটেল

জন্মদিনের পার্টিতে বন্ধুদের যোগসাজশে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার দিনের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামরার ফুটেজ রাখেনি বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল কর্তৃপক্ষ। বনানী থানা পুলিশ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক হোটেল ট্যুরিজম আইনের দোহাই দিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ সেই দিনের কোনো ফুটেজ রাখেনি। যে কারণে ফুটেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছে পুলিশ।

Advertisement

অন্যদিকে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩০ দিনের বেশি সময়ের ফুটেজ তারা রাখেন না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক হোটেল ট্যুরিজম আইনেও ৩০ দিনের বেশি সময়ের কোনো ফুটেজ রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কেউ যদি কোনো ঘটনায় সুনির্দিষ্ট সময় ও তারিখ উল্লেখ করে অভিযোগ করে তবে তা আলাদা করে রাখা হয় বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফরাসী নাগরিক ফ্রাঙ্ক ফরগেইট জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশকে আমরা সহযোগিতা করছি। পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করছে, এটা তাদের দায়িত্ব। প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য দিয়েছি। ইতোমধ্যে পুলিশ হোটেলে এসে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছে।

হোটেল ম্যানেজার বলেন, এখানে এ ধরনের কোনোও ঘটনা ঘটার তথ্য আগে জানতাম না। জন্মদিনের পার্টিতে অনেকেই এসেছিল বলেই জানি। তবে এতো দিন পর কে বা কতজন এসেছিল তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

অন্যদিকে এক্সিকিউটিভ ইন্টারনাল অপারেশন (ইআইও) ফারজানা আরাফ জাগো নিউজকে বলেন, ওইদিন এ ধরনের কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কি না তা জানা নেই। কারণ ওই সময় কেউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেননি।

তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা জানিয়েছি। বনানী থানা পুলিশ ফুটেজ চেয়েছিল আমরা দিতে পারিনি। তবে তারা সমস্ত ফুটেজ চেক করে দেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হলেও ৩০ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ রাখা সম্ভব হয়নি।

সেদিন জন্মদিনের পার্টির কথা বলে কারা কত টাকায় কত সময়ের জন্য হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল জানতে চাইলে ফারজানা আরাফ বলেন, হোটেলের প্রাইভেসি ও স্বার্থবিরোধী কোনো তথ্য দিতে তিনি বাধ্য নন।

Advertisement

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক আবদুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে ফুটেজ চেয়েছি কিন্তু তারা দেয়নি। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক হোটেল ট্যুরিজম আইনে বাধ্যবাধকতাও নেই। এছাড়া ৩০ দিনের বেশি সময়ের ফুটেজ নাকি তাদের অটো ডিলেট হয়ে গেছে।

আব্দুল মতিন বলেন, আমরা তবুও হোটেলটির সব ফুটেজ চেক করেছি। কিন্তু ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তিনদিন অতিবাহিত হলেও আসামিদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সাফাতের বাসায় কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। অন্য আসামিদের ধরতেও সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়েই বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর ৬ মে (শনিবার) সন্ধ্যায় বনানী থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তারা। মামলা নং ৮।

মামলার আসামিরা হলেন- সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম পাওয়া যায়নি)।

মামলা দায়েরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওই দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ধর্ষণের আলমত সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল মাহমুদ।

তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের, সে জন্য আদৌও কোনো আলামত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

জেইউ/জেডএ/এএইচ/এমএস