জাতীয়

পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ৫ দিনের ছুটিতে বনানী থানার ওসি

রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চললেও ছুটিতে রয়েছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী।

Advertisement

তার ছুটিতে যাওয়ার কারণ ‘একান্ত পারিবারিক’ বলে জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের (গুলশান জোন) এডিসি আব্দুল আহাদ।

যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ থেকে বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ৫ দিনের ছুটিতে গেছেন।

বনানীর ‘দ্যা রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নিতে চাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ করেছেন মামলার বাদীপক্ষ।

Advertisement

তবে এ বিষয়ে আব্দুল আহাদ বলেন, ‘ওসি ঠিক কবে ছুটির আবেদন করেছেন তা আমি নিশ্চিত নই। ডিসি স্যার মিটিংয়ে আছেন। তিনি বলতে পারবেন।’

ওসি সম্প্রতি ছুটি চেয়েছেন না কি ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার আগে ছুটি নিয়েছেন তা জানতে চেয়ে গুলশান ডিসির কার্যালয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ডিসির একান্ত সচিব জানান, ‘ডিসি স্যার ডিএমপির একটি মিটিংয়ে গেছেন।

এর আগে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজন অভিযোগ করেন, ‘ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আরও কয়েকবার ধর্ষিত হচ্ছি। পুলিশ বারবার একই ঘটনা (ধর্ষণের) শুনতে চাইছিল। অথচ অ্যাটেনটিভলি (মনোযোগ দিয়ে) শুনছিল না। গুরুত্বও দিচ্ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এক কথা বারবার বলতে হচ্ছিল। বারবার ওরা (পুলিশ) ইনফরমেশন মিস করছিল। অনেকবার শোনার পরে একপর্যায়ে বললেন, এসব কথা লিখতে হবে। আমরা স্টেটমেন্ট লিখলাম। এরপরে বললেন, আপনারা আজ চলে যান, আমরা তদন্ত করব, যদি দেখি ওরা অপরাধী তাহলে আমরা মামলা নেব।’

Advertisement

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই তরুণী বলেন, ‘পরদিন ডেকে আবার একই ঘটনা আবারও জিজ্ঞেস করেছে পুলিশ। বলেছে, এটা এটা আপনারা বলেন নাই, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। তখন আমরা বলছি, আমরা কোনো জিনিস বাদ দেই নাই। আপনারা মিস করেছেন, কারণ, আপনারা ইম্পর্টেন্স (গুরুত্ব) দেননি। আবার ডেকে আনছেন একই ঘটনা বলার জন্য।’

থানার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন রাতে আমাদের ডাকা হলো, মামলার কপি দেয়ার জন্য। যাওয়ার পরে পুলিশ আমাদের আটকে দেন। আমাদের বলা হলো- ছবি তুলতে হবে। আমরা তো ব্যাপারটা ভয় পাই- ছবি তুলব, আবার কী হয় না হয়। তখন আমরা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানাই। আমরা বলেছি ছবি তুলব না। সেখানে কয়েকজন মহিলা পুলিশ ছিলেন, তারা আমোদের সঙ্গে রুঢ় হয়ে বলেন- এখনই ছবি তুলতেই হবে।

আমরা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মিলি আপুকে জানাই। ভিকটিমদের থানায় থাকতে হবে এমন কোনো রুলস নেই বলে জানান তিনি। পরে অবশ্য আমাদের থানায় না রেখে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

ওই তরুণী বলেন, ‘আমরা প্রথমে যেদিন গিয়েছিলাম, সেদিন শুরুতে বেশ ভাল ব্যবহার করেছিল। আমরা অনেক সাহস পেলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা অন্যরকম আচরণ শুরু করে। হয়ত অভিযুক্তরা প্রভাবশালী জানার পর থেকে… শুনেছি তারা টাকাও খেয়েছে অনেক।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়েই বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর ৬ মে (শনিবার) সন্ধ্যায় বনানী থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৮।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম পাওয়া যায়নি)।

মামলা দায়েরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওই দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ধর্ষণের আলমত সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের, সে জন্য আদৌ কোনো আলামত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

জেইউ/এনএফ/জেআইএম