আন্তর্জাতিক

স্কুলশিক্ষিকা থেকে ফরাসি ফার্স্ট লেডি

ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত ট্রনক্স’র প্রেমকাহিনী বিমোহিত করেছে বিশ্বকে। তাদের প্রেমের সেই গল্প সম্পর্কেও লুকানোর কিছু নেই; যার শুরু হয়েছিল স্কুল ছাত্র ম্যাক্রোঁর ১৫ বছর বয়সে। সেই সময় ওই স্কুলের শিক্ষিকা ব্রিজিতের প্রেমে মজেছিলেন ম্যাক্রোঁ; যখন ব্রিজিতের চেয়ে ২৪ বছরের ছোট ছিলেন ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ আজকের প্রেসিডেন্ট (৩৯ বছর)।

Advertisement

স্কুল শিক্ষিকা থেকে জীবনসঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন ব্রিজিত; শুধু তাই নয় শেষ পর্যন্ত পরিণয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। জীবনের প্রত্যেকটি ধাপে বিজিত হয়ে উঠেন ম্যাক্রোঁর পরামর্শক ও উৎসাহদাতা।

এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটের পর ৩৯ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ বলেন, তাকে ছাড়া, আজকের আমি হতে পারতাম না।

বিজিতের বর্তমান বয়স ৬৪ বছর। সাত নাতি-নাতনি রয়েছে তার; ফ্রান্সের পরবর্তী ফার্স্ট লেডি হিসেবে প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসি প্রাসাদে উঠতে যাচ্ছেন তিনি। জনকল্যাণে ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। নির্বাচনের আগে ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, তিনি যদি নির্বাচিত হন; তাহলে তার প্রশাসনের একটি দায়িত্ব দেবেন স্ত্রী ব্রিজিতকে।

Advertisement

স্কুল শিক্ষিকা ব্রিজিতের জন্ম ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চেলের অ্যামিয়েনস শহরের মধ্যবিত্ত এক পরিবারে। পরিবারের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। ম্যাক্রোঁও বেড়ে উঠেছেন একই শহরে।

ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে তিনি প্রচলিত ধরাবাধা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ফরাসি সাহিত্য, লাতিন ও নাটকে তার স্থিতিশীল ক্যারিয়ার ছিল। বিয়ে করে ঘর বেঁধেছিলেন আন্দ্রে লউস অজিরে নামের এক ব্যাংকারকে; যে ঘরে তার তিন সন্তান রয়েছে।

‘ভালোবাসা নিয়ে গেছে সবকিছু এবং বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে। তাকে (ম্যাক্রোঁকে) প্রতিরোধ করা অসম্ভব ছিল’- ২০১৬ সালে প্যারিসের ম্যাচ ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন ব্রিজিত।

অজিরেকে তালাক দেন ২০০৬ সালে; এর এক বছর পর বিয়ে করেন ম্যাক্রোঁকে। শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে প্যারিসে ফেরেন তিনি। স্বামীকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ২০১৫ সালে শিক্ষকতা ছাড়েন তিনি। ওই সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন ম্যাক্রোঁ।

Advertisement

ফ্রান্সথ্রি টেলিভিশনের এক তথ্যচিত্রে ব্রিজিতকে দেখানো হয় ম্যাক্রোঁর কোচ হিসেবে। এর একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ম্যাক্রোঁকে বক্তৃতাদানের বিভিন্ন নির্দেশনা শিখিয়ে দিচ্ছেন ব্রিজিত। প্যারিস ম্যাচকে ব্রিজিত বলেন, ‘প্রত্যেক রাতে আমরা একত্রিত হই এবং পরস্পরের সম্পর্কে যা শুনেছি এসময় তার পুনরাবৃত্তি করি। তার সবকিছুতেই আমাকে মনযোগ দিতে হয়; এর বেশিরভাগই তার নিরাপত্তা নিয়ে।’

তার প্রাপ্তবয়স্ক শিশু সেবাস্তিয়ান, লরেন্স এবং টিপহাইনের সঙ্গে তাদের সৎ বাবার (ম্যাক্রোঁ) ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ম্যাক্রোঁর দল ‘এগিয়ে চল’ আন্দোলনের টি-শার্টে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে তাদের। ব্রিজিতকে বিয়ের আগে তার সন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ম্যাক্রোঁ।

তবে ম্যাক্রোঁ-ব্রিজিত জুটির সবচেয়ে রোমান্সের শুরু কখন হয়েছিল তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু ১৭ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ ব্রিজিতকে যেভাবে ধরে বসেছিলেন; তা খুব কমই দেখা গেছে। পড়াশোনার জন্য নিজ শহর  অ্যামিয়েনস ছাড়ার আগে ব্রিজিতকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা কিছুই কর না কেন, আমি তোমাকে বিয়ে করবোই।’

ব্রিজিতের সঙ্গে এমন রোমান্স মেনে নিতে পারেনি ম্যাক্রোঁর পরিবার। তার বাবা ব্রিজিতকে বলেছিলেন, ছেলের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত যেন দূরে থাকেন ব্রিজিত। ম্যাক্রোঁকে নিয়ে অ্যান্নে ফ্লুদার লেখা ‘এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ : এ পারফেক্ট ইয়ং ম্যান’ বইয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

একই ঘটনা দেখা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট তার চেয়ে ২৪ বছরের ছোট স্লোভেনিয়ান মডেল মেলানিয়া ট্রাম্পের প্রেমে মজেছিলেন। ডিজাইন ও আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনার পর মডেলিং শুরু করেন মেলানিয়া।

১৯৯৬ সালে মডেলিংয়ের জন্য নিউ ইয়র্কে আসেন। দু’বছর পর পরিচয় ট্রাম্পের সঙ্গে। ২০০৫ সালে ঘর বাধেন মেলানিয়া-ট্রাম্প। মোট পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন মেলানিয়া। মাতৃভাষা স্লোভেনিয়ান ছাড়াও ইংরেজি, ফরাসি, সার্বিয়ান ও জার্মান ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন নতুন ফার্স্ট লেডি।

এসআইএস/এমএস